জিরাফাতিটানের পুচ্ছরহস্য

জিরাফাতিটানের পুচ্ছরহস্য

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

সোরোপড ডাইনোসররা ছিল পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে অতিকায় প্রাণী। তাদের চলাফেরা কেমন ছিল, এই প্রশ্ন বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীদের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু। একসময় ধারণা ছিল এরা আধা-জলজ প্রাণী। কিন্তু বর্তমানে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে তারা আসলে স্থলভাগের জীবনে পুরোপুরি খাপ খাইয়ে নিয়েছিল। এত বিশাল দেহ নিয়ে কীভাবে তারা চলাফেরা করত, সেই রহস্য ভেদ করতেই বিজ্ঞানীরা এবার নজর দিয়েছেন তাদের লেজের দিকে। এই প্রেক্ষাপটে বার্লিনের একটি সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত জিরাফাতিটান ব্র্যাঙ্কাইয়ের প্রায় সম্পূর্ণ লেজের ১৮টি কশেরুকা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা নতুন তথ্য পেয়েছেন। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে “রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স” জার্নালে। উন্নত কাইনেমেটিক প্রোগ্রামের সাহায্যে প্রতিটি হাড়ের নড়াচড়া আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। এভাবে বিজ্ঞানীরা খুঁজে বের করেছেন কোথায় পেশি সংযুক্ত ছিল এবং সেই পেশি লেজকে কীভাবে নড়াচড়া করাত। গবেষক দলনেত্রী ড. ভেরোনিকা দিয়েজ দিয়াজ বলেন,

“আমাদের বিশ্লেষণে প্রমাণিত হয়েছে, জিরাফাতিটান- এর লেজ পূর্বে যা ভাবা গিয়েছিল তার থেকে অনেক বেশি নমনীয় ও বহুমুখী কাজে ব্যবহৃত হতো।“

ডাইনোসরের লেজ শরীরের ভারসাম্য রক্ষা তো করতই, উপরন্তু চলাফেরা, আত্মরক্ষা এবং একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগেও কাজে লাগত। আগে লেজকে কেবল কঠিন ও অচল অঙ্গ হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু নতুন গবেষণা প্রমাণ করেছে, আসলে লেজ ছিল ডাইনোসরের দেহের একটি সক্রিয় ও শক্তিশালী অংশ, যা তাদের দৈনন্দিন চলাফেরা এবং আচরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।

এই গবেষণায় লেজের নীচের দিকের হাড়ের বিশেষ বাঁকানো গঠনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যা আগে প্রায় উপেক্ষিত ছিল। এই নতুন বিশ্লেষণ দেখিয়েছে যে, লেজের নমনীয়তা ও শক্তি বৃদ্ধিতে এটির ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

উন্নত কম্পিউটার সিমুলেশন দেখিয়েছে যে, বার্লিন মিউজিয়ামে প্রদর্শিত জিরাফাতিটান মডেল যথেষ্ট যথাযথ। এই বিশাল ডাইনোসররা কুমিরের মতো লেজ টেনে হাঁটত না, বরং লেজ মাটি থেকে তুলে রাখত এবং সহজেই নানা দিকে ঘোরাতে পারত। এর মানে লেজ কেবল ভারসাম্যের জন্য নয়, বরং সামাজিক আচরণ ও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা পালন করত।

 

এই গবেষণা থেকে বোঝা যায়, সোরোপড ডাইনোসরদের শারীরবৃত্তীয় গঠন ও জীবনযাত্রা বোঝার ক্ষেত্রে লেজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জিরাফাতিটান ব্র্যাঙ্কাইয়ের লেজের উপর এই নতুন বিশ্লেষণ শুধু শারীরতত্ত্ব নয়, ভবিষ্যতে ডাইনোসরের বাস্তবসম্মত পুনর্গঠন এবং তাদের জীববৈজ্ঞানিক আচরণ ব্যাখ্যায়ও নতুন দিকনির্দেশনা দেবে।

 

সূত্র: Centres of rotation and osteological constraints on caudal ranges of motion in the sauropod dinosaur Giraffatitan brancai by Verónica Díez Díaz, Pasha A. van Bijlert, et.al ; Royal Society Open Science (13 August 2025 https://doi.org/10.1098/rsos.250851).

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − eleven =