
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা (আইইউসিএন) ঘোষণা করেছে যে, জিরাফ আসলে একক প্রজাতি নয়, চারটি ভিন্ন প্রজাতির সমষ্টি। বহু বছর ধরে গোটা আফ্রিকা জুড়ে জিরাফদের একটি মাত্র প্রজাতি হিসেবে ধরা হতো এবং তাদের ৮ থেকে ১১টি উপপ্রজাতিতে ভাগ করা হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোর গবেষণায় দেখা যায়, তাদের মধ্যে জিনগত ও শারীরবৃত্তীয় ভিন্নতা রয়েছে, যা নতুন শ্রেণিবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
দীর্ঘ পর্যালোচনার পর আইইউসিএন-এর জিরাফ অ্যান্ড ওকাপি স্পেশালিষ্ট গ্রুপ (জি ও এস জি) জিরাফের চারটি পৃথক প্রজাতিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যথা-
১. নর্দার্ন জিরাফ (জিরাফা ক্যামেলোপার্ডালিস ) – এরা মূলত নাইজার থেকে পূর্ব আফ্রিকার বিচ্ছিন্ন অঞ্চলের। এর তিনটি উপপ্রজাতি রয়েছে।
২. রেটিকুলেটেড জিরাফ (জি রেটিকুলাটা )- মূলত উত্তর কেনিয়া, ইথিওপিয়া ও সোমালিয়ার।
৩. মাসাই জিরাফ (জি.টিপ্পেলস্কিরচি) – এর দুটি উপপ্রজাতি আছে। এরা তানজানিয়া ও কেনিয়ার কেন্দ্র ও দক্ষিণ অংশের সমতলভূমিতে রাজকীয় ভঙ্গিতে বিচরণ করে।
৪. সাদার্ন জিরাফ (জি.জিরাফা) – এরও দুটি উপপ্রজাতি রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিস্তীর্ণ এলাকার, যথা- নামিবিয়া, বতসোয়ানা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবোয়ের ভূদৃশ্যের প্রতীক।
এই রূপান্তরমূলক সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ গবেষণা। গবেষণায় তিন ধরণের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে, যথা-
১.জিন বিশ্লেষণ করে ডিএনএ বলছে, জিরাফ আসলে চারটি স্বতন্ত্র বংশের।
২. অস্থি ও খুলি পরীক্ষায় শত শত জিরাফের খুলির নমুনায় গঠনগত পার্থক্য ধরা পড়েছে।
৩. ভৌগোলিক প্রতিবন্ধকতা, যেমন নদী ও রিফট ভ্যালি দীর্ঘদিন ধরে এদের আলাদা করে রেখেছে।
জিন বিশ্লেষণের প্রমাণই সবচেয়ে শক্তিশালী সংকেত দিয়েছে। জিরাফ আফ্রিকার বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জিনতাত্ত্বিকভাবে পরীক্ষিত। এসব গবেষণা একাধিকবার প্রমাণ করেছে যে তাদের চারটি আলাদা বংশ আছে।
এখন প্রতিটি প্রজাতির আলাদাভাবে আইইউসিএন রেড লিস্ট-এ বিপন্নতার মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। এর জন্য প্রতিটি প্রজাতির জিরাফের সংখ্যা, প্রবণতা ও বিপন্নতার তথ্য আলাদা করে সংগ্রহ করতে হবে। এতে বোঝা যাবে কোন প্রজাতি কতটা বিপন্ন, আর কোথায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
গবেষক মাইকেল ব্রাউন বলেন, এতদিন জিরাফকে একক ও শক্তিশালী প্রজাতি হিসেবে ধরা হচ্ছিল। ফলে ছোট ও ঝুঁকিপূর্ণ দলগুলো উপেক্ষিত ছিল। নতুন শ্রেণিবিন্যাসের ফলে প্রতিটি প্রজাতির জন্য আলাদা সংরক্ষণ পরিকল্পনা তৈরি করা সম্ভব হবে, যা সত্যিই জীবনরক্ষাকারী হতে পারে।
আইইউসিএন বিশেষজ্ঞ মাইকেল ব্রাউনের মতে, এটি শেষ নয় বরং জিরাফ গবেষণা ও সংরক্ষণের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এটি ভবিষ্যতে এই চার প্রজাতির জিরাফ সংরক্ষণকে আরও লক্ষ্যভিত্তিক ও কার্যকর করবে।
সূত্র : Four giraffe species officially recognised in major conservation reclassification – IUCN report (Press Release :21.8.2025).