জিহ্বা পৃষ্ঠের স্বতন্ত্র গঠন

জিহ্বা পৃষ্ঠের স্বতন্ত্র গঠন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং মানুষের জিভের ত্রি-মাত্রিক চিত্র থেকে জানা যায় যে আমাদের প্রত্যেকের জিভের পৃষ্ঠ আমাদের আঙুলের মতোই স্বতন্ত্র, নতুন গবেষণা থেকে এমনটাই জানা গেছে। গবেষণাটি সায়েন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই অধ্যয়ন আমাদের জিহ্বার পৃষ্ঠের জৈবিক গঠন এবং কীভাবে আমাদের স্বাদ এবং স্পর্শের অনুভূতি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে আলাদা হয় সে সম্পর্কে এক নতুন অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। মানুষের জিভ এক অত্যন্ত পরিশীলিত এবং জটিল অঙ্গ। জিভের পৃষ্ঠে শত শত ছোটো কুঁড়ির মতো গঠন রয়েছে যা কোরক বা প্যাপিলি নামে পরিচিত। জিভের এই কোরক স্বাদ গ্রহণে, কথা বলতে ও গিলতে সাহায্য করে। এই অসংখ্য ছোটো ছোটো গঠনের মধ্যে, ব্যাঙের ছাতার আকারে ফাঞ্জিফর্ম প্যাপিলি স্বাদ গ্রহণে সাহায্য করে আর মুকুট-আকৃতির ফিলিফর্ম প্যাপিলি জিভকে তার গঠন এবং স্পর্শের অনুভূতি দেয়। তবে মানুষের জিভে এই দুই প্রকারের প্যাপিলির আকার, আকৃতি এবং প্যাটার্নের পার্থক্য সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়।
ইউনিভার্সিটি অফ এডিনবার্গের স্কুল অফ ইনফরমেটিক্সের নেতৃত্বে গবেষকদের একটি দল, লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায়, এআই কম্পিউটার মডেলগুলোকে প্রশিক্ষিত করেছে যাতে সেগুলো মানুষের জিভের ত্রি-মাত্রিক মাইক্রোস্কোপিক স্ক্যান থেকে প্যাপিলির অনন্য বৈশিষ্ট্য দেখে শিখতে পারে। তারা ভিন্ন ভিন্ন প্যাপিলির দুই হাজারেরও বেশি স্ক্যান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ভরেছে। এআই মডেলগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে তারা অংশগ্রহণকারীদের প্যাপিলির স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পারে এবং প্রতিটি অংশগ্রহণকারীর বয়স ও লিঙ্গ সম্বন্ধে বলতে পারে। এই AI টুলটি ৮৫% নির্ভুলতার সঙ্গে প্যাপিলির প্রকারের পূর্বাভাস দিতে পারে এবং জিহ্বার পৃষ্ঠে তাদের অবস্থান সম্বন্ধেও ধারণা দিতে সক্ষম। লক্ষণীয়ভাবে, পনেরোজন অংশগ্রহণকারীদের প্যাপিলির স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং একটি একক প্যাপিলা থেকে ৪৮% নির্ভুলতার সাথে ব্যক্তিদের শনাক্ত করা যেতে পারে। এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ ইনফরমেটিক্সের প্রফেসর রিক সাকারের মতে গবেষণাটি মানুষের জিহ্বা পৃষ্ঠের জটিল গঠন বুঝতে সাহায্য করে। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য এই মাইক্রোন-আকারের বৈশিষ্ট্য খুবই স্বতন্ত্র। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গবেষণার মাধ্যমে স্বতন্ত্র খাবারের পছন্দ, স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্পের বিকাশ এবং মুখের ক্যান্সারের প্রাথমিক রোগ নির্ণয়ের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।