জীবন সংগ্রামে পটু মাকড়সা

জীবন সংগ্রামে পটু মাকড়সা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৪ মে, ২০২৫

জীবন সংগ্রামে দক্ষ যোদ্ধা বাদামী বিধবা মাকড়সারা শহরের বিভিন্ন এলাকায় আবর্জনার ড্রামে,বেড়ার খুঁটি এবং ঘরবাড়ির কোনায় লুকিয়ে বেঁচে থাকে। তাদের সফলতা শুধু অভিযোজনে নয় বরং তীব্র মাতৃত্বসুলভ প্রবৃত্তির দিক থেকেও। রয়েল সোসাইটির একটি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা পরজীবী বোলতার বিরুদ্ধে বাদামি বিধবা মাকড়সার ডিমের থলির প্রতিরক্ষা কৌশল পরীক্ষা করেন। দেখা গেছে এই ধরনের মাকড়সারা শুধু ভাগ্যের উপর নির্ভর করে না, সক্রিয়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বাদামি বিধবা মাকড়সার মাতৃ প্রবৃত্তি খুব তীব্র।

অনেক প্রজাতির জন্য ডিম উৎপাদন করা জীবনচক্রের সুরক্ষিত পর্যায় নয়। প্রতিরক্ষাহীন ও স্থির থাকায় এরা পরজীবী ও শিকারিদের চোখে আগে পরে। যেসব প্রাণী ডিম হিসাবে জীবন শুরু করে, যেমন মাকড়সা, মা বাবার প্রতিরক্ষাই তাদের বাঁচার একমাত্র আশা। এই কর্তব্যটি বাদামী বিধবা মাকড়সারা খুব গুরুত্ব সহকারে পালন করে। তারা সতর্কতার সাথে ডিম পাহারা দেয়। ক্ষুদ্র পরজীবী বোলতা ফিলোমেলা লাত্রদেত্রী মাকড়সার জালে প্রবেশ করে তাদের ডিমের থলিতে নিজেদের ডিম পাড়ার সুযোগ খোঁজে। এরপরই শুরু হয় টিকে থাকার সংঘর্ষ। বাদামি বিধবা মাকড়সারা খুবই আগ্রাসী প্রতিক্রিয়া দেখায়, তারা অপেক্ষা করে না। ডিমের থলি স্পর্শ করে কম্পন সৃষ্টি করে বোলতাকে সাবধান করে দেয়। এতে কাজ না হলে তারা আরো কঠোর হয়। মাকড়সারা বোলতাদের হত্যা করে এবং জাল থেকে ফেলে দেয়। কিন্তু তারা বোলতাকে খায় না। কারণ এটি ক্ষুধার বিষয় নয়, রক্ষার বিষয়।
আগ্রাসী প্রতিরোধের পাশাপাশি বাদামী বিধবা মাকড়সারা আরেকটি অস্ত্র প্রয়োগ করে, সেটি হল রেশম কাঁটা। তারা তাদের ডিমের থলিগুলোকে ঘন ও তীক্ষ্ণ রেশম কাঁটা দ্বারা ঢেকে দেয়, যা বোলতাদের প্রবেশ করতে বাধা দেয়।
গবেষকরা এই কৌশলটিকে পরীক্ষা করেন। তারা কিছু ডিমের থলি থেকে কাঁটা সরিয়ে ফেলে বাকিগুলো অপরিবর্তিত রাখেন। এরপর পরজীবী বোলতাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। দেখা যায়, বোলতাগুলো মসৃণ কাঁটাবিহীন থলিগুলোকে বেশি পছন্দ করে সেখানে ডিম পেড়েছে।
বাদামি বিধবা মাকড়সারা শুধু আক্রমণের জন্য অপেক্ষা করে না, তারা অভিযোজন করে। যখন বোলতা কাছাকাছি থাকে তারা তাদের ডিমের থলির চারপাশের রেশম কাঁটাকে আরো ঘন করে তোলে। এটি বিপদের সম্ভাবনা বাড়লে প্রতিরক্ষা জোরদার করার একটি হিসেবি পদক্ষেপ।
অনুপ্রবেশকারী প্রজাতিরা বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তনের জন্য দায়ী। বিজ্ঞানীরা অনুধাবন করেছেন যে ,বেঁচে থাকার যুদ্ধ তাদের অনুমানের তুলনায় অনেক বেশি কঠিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − fifteen =