
১৯৯২ সালের ২২শে মে রি ও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত বসুন্ধরা শীর্ষ সম্মেলনে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ চুক্তি গৃহীত হওয়ার পর থেকে রাষ্ট্র সঙ্ঘের অনুমোদনে প্রতি বছর ২২শে মে আন্তর্জাতিক জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। লক্ষ্য হল, জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং পরিবেশ,বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
যখন বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে প্রকৃতির সাথে আমাদের সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করতে আহ্বান জানানো হয়, তখন একটি বিষয় স্পষ্ট যে, আমাদের সকল প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পরেও জল, খাদ্য, ওষুধ, পোশাক, জ্বালানি, আশ্রয় এবং শক্তির যোগান প্রভৃতির ক্ষেত্রে আমাদের অস্তিত্ব সম্পূর্ণভাবে সুস্থ ও প্রাণবন্ত বাস্তুতন্ত্রের উপর নির্ভরশীল। এ কারণেই আমাদের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, সুরক্ষা এবং পুনরুদ্ধার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বন্যপ্রাণীর নির্বিচার শোষণের ফলে বহু প্রজাতির অস্তিত্ব সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে, যার ফলে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে এবং পরিবেশগত ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে।
২০২২ সালে বিশ্ব একটি নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, জীববৈচিত্র্যের জন্য কুনমিং-মন্ট্রিয়াল গ্লোবাল বায়োডাইভারসিটি কাঠামোকে স্বীকৃতি দেয়। এতে ২০৩০ সালের জন্য ২৩টি লক্ষ্য এবং ২০৫০ সালের জন্য ৫টি বৈশ্বিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।এর অন্যতম মূল লক্ষ্য হল, ২০% অবনমিত বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা এবং বহিরাগত আগ্রাসী প্রজাতির বিস্তার ৫০% হ্রাস করা। “প্রকৃতির সাথে সম্প্রীতি এবং টেকসই উন্নয়ন” থিমের অধীনে এই আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবসটি একটি বিষয় তুলে ধরে : প্রকৃতির জন্য এই পরিকল্পনা কীভাবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সংযুক্ত হয়। উভয় আলোচ্যসূচি একে অপরকে সমর্থন করার সাথে সাথে একসাথে এগিয়ে যেতে হবে।
জীববৈচিত্র্য শুধু উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রকারভেদ নয়; নির্দিষ্ট প্রজাতির মধ্যে জিনগত বৈচিত্র্য এবং বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তনও এর অন্তর্ভুক্ত । উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মাছ বিশ্বব্যাপী ৩ বিলিয়ন মানুষের প্রাণীজ প্রোটিনের মূল উৎস এবং অধিকাংশ মানুষের খাদ্যের ৮০% আসে উদ্ভিদ থেকে।
কিন্তু এই জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি মানব স্বাস্থ্যকেও হুমকির মধ্যে ফেলেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি প্রাণীদের মধ্যে সংক্রামক রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা বাড়ায়। আর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত থাকলে এটি ভবিষ্যৎ মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কার্যকর উপায় হতে পারে।
এই সমস্যার সমাধানে আমাদের এখনই উদ্যোগ নিতে হবে, কারণ ২০২৫ সালের মধ্যে গ্লোবাল বায়োডাইভারসিটি ফ্রেমওয়ার্ক ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যর সময়সীমা দ্রুত শেষ হয়ে আসবে।
এটি বিশ্বজোড়া এক বৃহত্তর প্রচেষ্টা, যেখানে প্রতিটি মানুষের সচেতনতাই হবে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ।