
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও স্মিথসোনিয়ান সংগ্রহশালার বিজ্ঞানীরা কেনিয়ার রিফট ভ্যালি অঞ্চল থেকে পাওয়া ১৮ মিলিয়ন বছর পুরনো জীবাশ্ম দাঁতে প্রাচীন প্রোটিনের উপস্থিতি নিয়ে এক অভূতপূর্ব গবেষণা প্রকাশ করেছেন। দাঁতের এনামেলে সংরক্ষিত এই প্রোটিনগুলো প্রাণীর অতীত জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশ ও বিবর্তনের উপর আলোকপাত করেছে।
গবেষণার প্রধান লেখক এবং হার্ভার্ডের হিউম্যান ইভোলিউশনারি বায়োলজি বিভাগের ড্যানিয়েল গ্রিন বলেন, “দাঁত আমাদের মুখের পাথর। এগুলি প্রাণীদেহে তৈরি সবচেয়ে কঠিন গঠন এবং এদের মধ্যেই দীর্ঘমেয়াদী রাসায়নিক তথ্য লুকানো থাকে।” পূর্বে ধারণা ছিল, দাঁতের শক্ত এনামেলে খুব অল্পই প্রোটিন থাকে। তবে আধুনিক প্রযুক্তি লিকুইড ক্রোমাটোগ্রাফি ট্যান্ডেম মাস স্পেকট্রোমেট্রি (এল সি- এম এস/ এম এস) ব্যবহার করে গবেষকরা বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।
প্রথমে আধুনিক দাঁত বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দাঁতের এনামেলে বিপুল সংখ্যক প্রোটিনের উপস্থিতি নিশ্চিত করেন। এরপর স্মিথসোনিয়ান ও কেনিয়ার জাতীয় সংগ্রহশালার সহায়তায় প্রাচীন হাতি ও গন্ডারের দাঁতের জীবাশ্ম নিয়ে গবেষণা চালান। এদের দাঁতের এনামেল ২-৩ মিলিমিটার পুরু হওয়ায় গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত উপাদান ছিল।
এই জীবাশ্মদের দাঁতে সংরক্ষিত পেপটাইড ফ্র্যাগমেন্ট বা অ্যামিনো অ্যাসিডের ক্ষুদ্র শৃঙ্খল আবিষ্কার ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৮ মিলিয়ন বছর আগের এই প্রোটিনের টুকরোগুলো এখন পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া সবচেয়ে পুরনো। আগে সর্বোচ্চ ৩.৫ মিলিয়ন বছর পুরনো পেপটাইড শনাক্ত করা গিয়েছিল।
এই গবেষণায় পাওয়া বিভিন্ন ধরনের প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত প্রোটিওম প্রাণীদের বিভিন্ন জৈবিক কার্যক্রমের তথ্য দেয়। একাধিক প্রোটিনের মাধ্যমে বিলুপ্ত প্রজাতির বিবর্তনগত সম্পর্ক, খাদ্যাভ্যাস, রোগ, এমনকি মৃত্যুকালীন বয়স পর্যন্ত অনুমান করা সম্ভব।
সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো, যেসব প্রাণীর কোনো জীবিত উত্তরসূরি নেই, তাদের দাঁত থেকেও প্রোটিন নিয়ে বিবর্তনের মানচিত্রে তাদের স্থান নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে। এই আবিষ্কার জীবাশ্মবিদ্যার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এখন হাড় বা অন্যান্য গঠন ছাড়াও প্রাণীর জৈববৈজ্ঞানিক ইতিহাস উন্মোচন করা সম্ভব হবে।
তথ্যসূত্র: “Eighteen million years of diverse enamel proteomes from the East African Rift”by Daniel R. Green et al,
, 9 July 2025, Nature.