জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ অন্য ছায়াপথ থেকেও পৃথিবীর প্রাণ চিহ্নিত করতে সক্ষম

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ অন্য ছায়াপথ থেকেও পৃথিবীর প্রাণ চিহ্নিত করতে সক্ষম

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

নতুন গবেষণা বলছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডব্লিউএসটি) যদি আকাশগঙ্গার অন্য নক্ষত্র থেকে আমাদের পৃথিবীর ওপর নজর রাখে তবে আমাদের সভ্যতার চিহ্নগুলো খুঁজে পাবে। এই অনুসন্ধান আশা জাগিয়েছে যে এই অত্যাধুনিক মহাকাশযান আমাদের ছায়াপথের দূরবর্তী বিশ্বের দিকে তাকানোর সাথে সাথে ভিনগ্রহী সভ্যতাগুলো শনাক্ত করতে পারবে।

২০২১ সালের শেষে চালু হওয়ার পর থেকে, কীভাবে প্রাথমিক মহা বিশ্ব গঠিত হয়েছিল সে সম্পর্কে সূত্রের সন্ধানে জেডব্লিউএসটি প্রধানত মহাবিশ্বের গভীরতম অংশে সন্ধান করছে । কিন্তু টেলিস্কোপের অন্য উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে একটা হল কাছাকাছি এক্সোপ্ল্যানেট বা সৌরজগতের বাইরের গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করা, জৈবিক জীবন দ্বারা উত্পাদিত কোনো গ্যাস বা উন্নত ভিনগ্রহী সভ্যতা দ্বারা উত্পাদিত রাসায়নিক পাওয়া যায় কিনা তা সন্ধান করা। এই পদ্ধতিদুটো যথাক্রমে বায়োসিগনেচার এবং টেকনোসিগনেচার নামে পরিচিত৷ বর্তমানে চালু সবচেয়ে উন্নত টেলিস্কোপ হওয়া সত্ত্বেও, জেডব্লিউএসটি কতটা বুদ্ধিমান জীবনের চিহ্ন চিহ্নিত করতে সক্ষম হবে সেই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য, গবেষকদের এখনও পর্যন্ত জানা মহাবিশ্বের একমাত্র বাসযোগ্য এবং বসবাস করা হয় আমাদের পৃথিবীর তথ্য এই টেলিস্কোপকে শনাক্ত করতে দেওয়া হয়েছে।
নতুন গবেষণায়, ২৮ শে আগস্ট প্রাক-প্রিন্ট সার্ভার arXiv-এ জানানো হয়েছে, গবেষকরা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের একটা বর্ণালী নিয়েছিলেন এবং ইচ্ছাকৃতভাবে সেই ডেটার গুণমান কয়েক ডজন আলোকবর্ষ দূরে একজন পর্যবেক্ষক যেমনভাবে দেখতে পাবেন, তেমনভাবে হ্রাস করে, একটা কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করেন, যা জেডব্লিউএসটি-এর সেন্সর ক্ষমতার প্রতিলিপি তৈরি করে। দেখা হয় মহাকাশযান ডেটাসেট থেকে জৈবিক জীবন দ্বারা উত্পাদিত বায়োসিগনেচার মিথেন, অক্সিজেন এবং মানুষের দ্বারা উত্পাদিত টেকনোসিগনেচার নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড এবং ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (সিএফসি) -এর মতো মূল জৈবের চিহ্ন এবং সনাক্ত করতে পারছে।
জেডব্লিউএসটি ইতিমধ্যে পৃথিবীর কাছাকাছি এক্সোপ্ল্যানেট সম্পর্কে কিছু আকর্ষণীয় আবিষ্কার করেছে। এই টেলিস্কোপ পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০ আলোকবর্ষ দূরে নেপচুন-আকারের এক্সোপ্ল্যানেট GJ 1214b-তে জল শনাক্ত করেছে, তাছাড়া দেখেছে যে, TRAPPIST-1 নক্ষত্রের দ্বিতীয় নিকটতম এক্সোপ্ল্যানেট TRAPPIST-1b -তে সম্ভবত কোনও বায়ুমণ্ডল নেই, TRAPPIST- 1 এর চরম তাপ এর পেছনে কারণ হতে পারে। এই মহাকাশযান পৃথিবী থেকে ৪০ আলোকবর্ষ দূরে “সুপার-জুপিটার” এক্সোপ্ল্যানেট VHS1256 B-এর বায়ুমণ্ডলে একটা বিশাল ধূলিকণার ঝড়ও দেখতে পেয়েছিল ।
জেডব্লিউএসটি শনির চাঁদ এনসেলাডাস থেকে বেরিয়ে আসা দৈত্যাকার ফোয়ারা শনাক্ত করেছে, যাতে জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক উপাদান থাকতে পারে। এবং মহাকাশের আরও বাইরে, মহাকাশযানটি পৃথিবী থেকে ১০০০ আলোকবর্ষেরও দূরে একটা শিশু নক্ষত্র সিস্টেমে সম্ভাব্য জীবনদায়ী কার্বন যৌগের আভাস দিয়েছে।