
জীবন্ত প্রাণীরা সময় পর্যবেক্ষণ করে এবং তার সাথে প্রতিক্রিয়া ঘটায়। মাইক্রোসেকেন্ডে আলো এবং শব্দ শনাক্ত করা থেকে শুরু করে পূর্ব-প্রোগ্রাম করা উপায়ে তারা তাদের শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া জানায় দৈনন্দিন ঘুম চক্র, মাসিক চক্র বা ঋতু পরিবর্তনের মাধ্যমে। এই সময়-সংবেদী বিক্রিয়াগুলিকে আণবিক সুইচ বা ন্যানোমেশিন দ্বারা চালু করা হয় । এই আণবিক সুইচ বা ন্যানোমেশিন সুনির্দিষ্ট আণবিক টাইমার হিসাবে কাজ করে। এর মাধ্যমে পরিবেশগত সংকেত এবং সময়ের ব্যবধানের প্রতিক্রিয়া চালু করা বা থামানো যায়। নতুন পথ-দেখানো এক গবেষণায়, ইউনিভার্সিটি ডি মন্ট্রিলের বিজ্ঞানীরা এমন দুটি স্বতন্ত্র প্রক্রিয়ার প্রতিলিপি তৈরি করে যাচাই করেছেন যা ন্যানোমেশিনের সক্রিয়করণ এবং নিষ্ক্রিয়করণের হার দুটোকেই নিয়ন্ত্রণ করে । জীবন্ত সিস্টেমে একাধিক সময়সীমা জুড়ে এই প্রক্রিয়াগুলি কীভাবে কাজ করে তা এই গবেষণা অনেকাংশেই ব্যাখ্যা করেছে । তাঁদের গবেষণার ফলাফল জার্নাল অফ দ্য আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটিতে প্রকাশিত হয়েছে ।
জৈব-আণবিক সুইচ বা ন্যানোমেশিন সাধারণত প্রোটিন বা নিউক্লিক অ্যাসিড দিয়ে তৈরি । এগুলি জৈবিক যন্ত্রপাতির মূল উপাদান। এরা হাজার হাজার গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে, যেমন রাসায়নিক বিক্রিয়া, অণু পরিবহন, শক্তি মজুদ করা এবং চলাচল ও বৃদ্ধি ঘটানো। কিন্তু বিভিন্ন সময়সীমার মধ্যে এই সুইচগুলি কীভাবে সক্রিয় হয়েছে, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যা দীর্ঘদিন রসায়নবিদদের মুগ্ধ করেছে । ১৯৬০-এর দশকে মনোড-ওয়াইম্যান-চেঞ্জেক্স এবং কোশল্যান্ড-নেমেথি-ফিল্মারের অগ্রণী কাজের পর থেকে সাধারণত ধরে নেওয়া হয়, এ দুটি প্রক্রিয়া জৈব-আণবিক সুইচগুলির সক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণ করে ।
UdeM-এর রসায়নের অধ্যাপক অ্যালেক্সিস ভ্যালি-বেলিসল বলেছেন, “এই দুটি প্রক্রিয়া চিত্রিত করার জন্য একটি দরজার উপমা খুব আদর্শ । বন্ধ দরজাটি সুইচ বা ন্যানোমেশিনের নিষ্ক্রিয় কাঠামোর প্রতিনিধিত্ব করে, আর খোলা দরজাটি তার সক্রিয় কাঠামোর প্রতিনিধি। এটি সুইচ এবং সক্রিয় অণুর মধ্যে মিথস্ক্রিয়া, যেমন আলো বা অণু, যা সক্রিয়করণ প্রক্রিয়ার ধরণ নির্ধারণ করে।” বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি বুঝতে পেরেছেন যে এই প্রক্রিয়াগুলিকে উন্নততর ন্যানোসিস্টেম নির্মাণের কাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে। তাঁরা ডিএনএ ব্যবহার করে একটি সহজ আণবিক “দরজা” সফলভাবে পুনঃনির্মাণ করেছেন। ডিএনএ মূলত জীবন্ত প্রাণীর জিন সংকেত উদ্ধার করার ক্ষমতার জন্য পরিচিত । বিজ্ঞানীরা এই ডিএনএ-কে ন্যানোস্কেলে বেশ কিছু জৈবপ্রকৌশলী বস্তু তৈরি করতে ব্যবহার করছেন । তাঁরা একটি 5-ন্যানোমিটার-প্রশস্ত “দরজা” তৈরি করেছেন যাকে একই সক্রিয় অণু ব্যবহার করে দুটি স্বতন্ত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সক্রিয় করা যেতে পারে। এর সাহায্যে একই ভিত্তিতে উভয় সুইচ চালানোর প্রক্রিয়ার সঙ্গে তুলনা করা সম্ভব হয়েছে। গবেষক কার্ল প্রেভোস্ট-ট্রেম্বলে বলেছেন, ” আমরা আসলে আণবিক হাতল ডিজাইন করে ঘন্টা থেকে সেকেন্ডে সক্রিয়করণের হার পরিবর্তন করতে পারি।” বিভিন্ন হারে সক্রিয় এবং নিষ্ক্রিয় করে এমন ন্যানোসিস্টেম তৈরির ফলে ন্যানোমেডিসিনের ক্ষেত্রটি ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। এর লক্ষ্য হল প্রোগ্রাম করা যায় এমন ড্রাগ-মুক্তির হার সহ ড্রাগ-ডেলিভারি সিস্টেম তৈরি করা। এটি রোগীর কতবার ওষুধ খাওয়া উচিত তা কমাতে সাহায্য করবে এবং চিকিৎসার সময়কালে শরীরে ওষুধের সঠিক ঘনত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
সূত্র: “Programming the Kinetics of Chemical Communication: Induced Fit vs Conformational Selection” by Carl Prevost-Tremblay, Achille Vigneault, Dominic Lauzon and Alexis Vallee-Belisle, 19 December 2024, Journal of the American Chemical Society.
DOI: 10.1021/jacs.4c08597