ডাইনোসরের যুগেই স্যামন মাছের আবির্ভাব

ডাইনোসরের যুগেই স্যামন মাছের আবির্ভাব

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৩ মে, ২০২৫

যখন ডাইনোসররা পৃথিবীতে বিচরণ করছিলো তখন স্যামন মাছেরা সুমেরু অঞ্চলের নদীগুলিতে ভিড় করে আসতো। ক্রিটেশিয়াস যুগের কথা ভাবলে সচরাচর স্যামন মাছের কথা মাথায় আসে না। সেসময় উষ্ণ-আর্দ্র ক্রান্তীয় অঞ্চলের প্রধান আকর্ষণই ছিল বিশাল ডাইনোসর। কিন্তু বর্তমান উত্তর আলাস্কার ছবিটা ছিল একটু অন্যরকম, যদিও আশ্চর্যজনকভাবে পরিচিত । তখন মিষ্টি জলের নদী ও খালগুলো সরীসৃপ বা ডাইনোসরদের পরিবর্তে স্যামন ও পাইক মাছের আদি প্রজাতিতে পূর্ণ ছিল।
সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস -এর এক গবেষণায় ৭৩ মিলিয়ন বছর আগের তিনটি নতুন প্রজাতির মাছ শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একটি হল সিভুলিউসাল্‌মো আলাস্কেনসিস। জীবাশ্ম-প্রমাণ অনুসন্ধান করে দেখা গেছে এটি স্যামন পরিবারের সবচেয়ে পুরনো সদস্য।
ইউনিভার্সিটি অফ আলাস্কা মিউজিয়াম অফ দ্য নর্থের পরিচালক প্যাট্রিক ড্রকেনমিলার বলেছেন, এটি যে শুধুমাত্র একটি নতুন প্রজাতি তা-ই নয়, এটি নথিভুক্ত স্যামন সদৃশ জীবাশ্মদের মধ্যে প্রাচীনতম স্যালমনিড । গবেষকরা আরও দুটি নতুন পাইক প্রজাতির জীবাশ্ম পেয়েছেন। পাশাপাশি সুমেরু অঞ্চলের কার্প ও মিনোস পরিবারের প্রাচীনতম নিদর্শন শনাক্ত করেছেন ।
গবেষকরা মনে করেন, এই মাছগুলো সুমেরু অঞ্চলের স্বাদুজলের বাস্তুতন্ত্রে আধিপত্য বিস্তার করেছে তার কারণ হয়তো এরা তাপমাত্রা ও আলোর পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে পেরেছিল ।এই স্থিতিশীলতাই সম্ভবত তাদের আজও সুমেরুতে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে। এই মাছের জীবাশ্ম উত্তর আলাস্কার প্রিন্স ক্রিক ফর্মেশন থেকে পাওয়া গেছে। এটি মূলত ডাইনোসরের হাড়ের বিপুল সম্ভারের জন্য পরিচিত। এই সব ছোটো ছোটো জীবাশ্মগুলোই বাস্তুতন্ত্রের আরও বিস্তারিত ইতিহাসের ধারক। এদের জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়া এত সহজ ছিল না। কারণ এরা আকারে খুবই ছোটো। গবেষকরা সমুদ্রের বালি ও পলিমাটি সংগ্রহ করে ল্যাবে নিয়ে গিয়ে মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে পরীক্ষা করে এদের জীবাশ্ম শনাক্ত করেন। এদের ক্ষুদ্র চোয়ালের গঠন দেখে একটি নতুন স্যামন প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। চোয়াল্টা এতই ছোটো যে একটা রাবারের ওপর রাখা যায়। এদের আরও বিস্তারিতভাবে দেখার জন্য অন্টারিওর ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো বোল্ডার এর বিজ্ঞানীরা মাইক্রো কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি প্রযুক্তির ব্যবহার করেছেন। এর সাহায্যে তাঁরা জীবাশ্মগুলোকে ত্রিমাত্রিকভাবে দেখতে সক্ষম হয়েছেন।
গবেষণার ফলাফল প্রমাণ করে যে, স্যামন মাছ সম্ভবত দক্ষিণ থেকে উত্তরে অভিবাসন করেনি বরং এদের বিবর্তন ঘটেছিল উত্তরের উচ্চ অক্ষাংশীয় অঞ্চল থেকেই। এই ধারণাটি ঠিক প্রমানিত হয়েছে। কারণ একই শিলাস্তরে নিম্ন অক্ষাংশীয় অর্থাৎ দক্ষিণের কোনো মাছের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এ থেকে মনে হয়, সুমেরু-ডাইনোসরদের যুগেই স্যামনের সূত্রপাত ঘটেছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 4 =