ডাইনোসরের রাজত্বের অবসান

ডাইনোসরের রাজত্বের অবসান

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৪ আগষ্ট, ২০২৪
ডাইনোসর

সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে পৃথিবীতে আঘাত হেনেছিল এক মহাকাশ শিলা। ধ্বংস করেছিল বসবাসকারী প্রাচীন জীবনের অস্তিত্ব। চিরতরে হারিয়ে গিয়েছিল অসংখ্য প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী ও উদ্ভিদ। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছিলেন চিক্সুলাব ইভেন্ট। নন-এভিয়ান ডাইনোসরদের রাজত্বের অবসান ঘটেছিল। স্তন্যপায়ী প্রাণীর উত্থানের পথ পরিষ্কার হয়েছিল। সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে আমাদের সৌরজগতে, বৃহস্পতির কক্ষপথের বাইরে, সূর্যের আলো এবং উষ্ণতা থেকে অনেক দূরে, শীতল, কালো অন্ধকার অঞ্চল থেকে একটি গ্রহাণু থেকে বেরিয়ে এসেছিল সেই শিলা। গবেষকদের একটি আন্তর্জাতিক দলের মতে এটি কোনো ধূমকেতুর অংশ ছিল না। এই আবিষ্কার আমাদের পৃথিবীর ইতিহাস এবং সৌরজগতের বাকি অংশের সাথে এর মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে একটি নতুন ধারণা দেয়। সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকেই পৃথিবীতে বারংবার বড়ো বড়ো মহাকাশ শিলা আঘাত হেনেছে। বড়ো কিছুর সাথে সংঘর্ষের ফলে আমাদের গ্রহটি ক্ষতবিক্ষত হয়েছে, সৃষ্টি হয়েছে বিশালাকার গর্তের। পৃথিবীতে গণবিলুপ্তি ঘটেছে বেশ কিছু প্রাণীর। তবে ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে ক্রিটেসিয়াস-প্যালিওজিন বিলুপ্তিতে আনুমানিক ৭৬% প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটে এবং এদের মধ্যে ছিল ডাইনোসরও। সেই সময়ে, আকারে ১০ কিলোমিটারের মতো বড়ো একটি গ্রহাণু বর্তমানের ইউকাটান উপদ্বীপে আছড়ে পড়ে। নিশ্চিহ্ন করে দেয় বহু প্রজাতির প্রাণী।
কিন্তু এই মারাত্মক পাথরের উৎপত্তি কোথায়? যদিও আমরা সময়কে রিওয়াইন্ড করে সেই সময় বা স্থানে ফিরে যেতে পারবো না, আকাশের মধ্য দিয়ে তার গতিপথ পর্যবেক্ষণ করতে পারবো না এবং সৌরজগতের সেই স্থানে পৌঁছতে পারবো না। তবে আমরা পাথরের মধ্যে সংরক্ষিত পলির স্তরকে পর্যবেক্ষণ করতে পারি, আঘাতের সময় পৃথিবীর বুকে খনিজের অবশিষ্ট অংশের সন্ধান করে তা পরিচিত স্পেস রকের সাথে মিলিয়ে নিতে পারি। ক্রিটেসিয়াস-প্যালিওজিন স্তরে- ইরিডিয়াম, রুথেনিয়াম, অসমিয়াম, রোডিয়াম, প্ল্যাটিনাম এবং প্যালাডিয়ামের মতো খনিজের অংশ পাওয়া যায়। প্ল্যাটিনামের মতো উপাদানগুলো পৃথিবীতে বেশ বিরল, বিশেষত পৃষ্ঠে। কিন্তু এই খনিজ উল্কাপিণ্ডের মধ্যে থাকতে পারে। তবে শুধু চিক্সুলাব ঘটনার কারণেই যে এই গণবিলুপ্তি তা কিন্তু একেবারেই নয়। ক্রিটেসিয়াস-প্যালিওজিন সময় সীমার আশেপাশে প্রায় এক মিলিয়ন বছর ধরে, ডেকান ট্র্যাপস বা আমরা এখন যাকে ‘দাক্ষিণাত্য’ বলে জানি সেই বিশাল আগ্নেয়গিরি অঞ্চল থেকে একের পর এক আগ্নেয়গিরি থেকে বেরনো লাভাস্রোতে প্রায় প্রতি মুহূর্তেই ক্ষতবিক্ষত করছিল পৃথিবী্কে। প্ল্যাটিনামের মতো খনিজ উপাদানগুলোর আরেকটি সম্ভাব্য উত্স এই উদ্গীরণ।
গবেষণায় রুথেনিয়াম নামের খনিজের উপর কাজ করা হয়েছিল। গবেষকরা প্রকৃত উল্কাপিণ্ড থেকে রুথেনিয়াম বিশ্লেষণ করেছেন এবং সেই ফলাফল পৃথিবীর বুকে তৈরি হওয়া রুথেনিয়ামের নমুনার সঙ্গে পরীক্ষা করেছেন। তারা দেখেন ক্রিটেসিয়াস-প্যালিওজিন স্তরের রুথেনিয়াম খনিজটি পৃথিবীর মতো নয় সম্ভবত এটি মহাকাশ থেকে এসেছে। বৃহস্পতির কক্ষপথের বাইরের সৌরজগত থেকে আসা কার্বনসমৃদ্ধ কার্বোনাসিয়াস কনড্রাইট নামের একটি বিরল ধরনের গ্রহাণুর সাথে এর সামঞ্জস্য পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন বৃহস্পতি সৌরজগতের বাইরের বস্তু থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে। তবুও অনেক সময় কিছু গ্রহাণু বেরিয়ে আসে ও ছোটোখাটো আকারে পৃথিবীতে আঘাত হানে। তবে চিক্সুলাব ইম্প্যাক্ট্ররের চেয়ে তাদের প্রভাব অনেক কম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen + fifteen =