ডি এন এ দিয়ে শিকড় চেনা

ডি এন এ দিয়ে শিকড় চেনা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

আমরা যখন কৃষিক্ষেত্র দিয়ে হেঁটে যাই সাধারণত আমাদের চোখে পড়ে শুধুমাত্র একটা পূর্ন বিটপের উপরিভাগ। কিন্তু , মাটির নীচে লুকিয়ে থাকে উদ্ভিদের আসল শক্তি শিকড়ের বিশাল জগৎ। তা জল ও পুষ্টি শোষণ করে উদ্ভিদকে খাড়া দাঁড় করিয়ে রাখে, এমনকি মাটিতে কার্বন আটকে রেখে জলবায়ু পরিবর্তন ধীর করে। এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সত্ত্বেও শিকড় পরিমাপের নির্ভুল পদ্ধতি আগে ছিল না। প্রচলিত উপায় ছিল মাটি খুঁড়ে শিকড় ধুয়ে, শুকিয়ে তারপর ওজন করে দেখা। পদ্ধতিটা সময়সাপেক্ষ এবং সূক্ষ্ম শিকড়গুলো নষ্ট হয়ে যেত। ফলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশই অদৃশ্য থেকে যেত।

এবার মুশকিল আসান হিসেবে এসে গেছে নতুন প্রযুক্তি ড্রপলেট ডিজিটাল পিসিআর (ডি ডি পি সি আর)। এই পদ্ধতিতে মাটির ছোট্ট নমুনাকে হাজারো ছোট ছোট ফোঁটায় ভাগ করে নিয়ে প্রতিটির ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। এতে ব্যবহৃত হয় ITS2 নামক জিন নির্দেশক, যা এক প্রকার “বারকোড” -এর মতো কাজ করে। ফলে শুধু শিকড় আছে কিনা তাই নয়, তা কোন প্রজাতির এবং তার অবদান কতটা তাও জানা যায়। এই প্রযুক্তি শুধু নির্ভুলই নয়, যেকোনো পরিস্থিতিতেই কার্যকর। গবেষণায় দেখা গেছে, একই মাটিতে রাইগ্রাস, ক্লোভার আর ইয়্যারো একসাথে বেড়ে উঠলেও এই নতুন পদ্ধতি আলাদাভাবে প্রতিটি প্রজাতির শিকড় চিহ্নিত করতে পেরেছে। সংকর প্রজাতি নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি হলেও, সামগ্রিক নির্ভুলতা উচ্চ মানের ছিল।

পূর্বে অনুসৃত পদ্ধতি মাটির দূষণ ও অনিয়মিত প্রতিক্রিয়ার কারণে সঠিক ফল দিত না। কিন্তু , নতুন পদ্ধতি প্রতিটি ড্রপলেটকে আলাদা করে, সরাসরি ডিএনএ অণু গুণে নেয় এবং পরিসংখ্যানের মাধ্যমে শিকড়ের জৈবভর নির্ভরযোগ্যভাবে হিসাব করে। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, অল্প বা বেশি শিকড় যাই থাকুক, ফল সবসময় সঠিক থাকে।
এ প্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। জলবায়ু বিজ্ঞানীরা এখন নির্ধারণ করতে পারবেন উদ্ভিদ ঠিক কতটা কার্বন মাটির নীচে সংরক্ষণ করছে। কৃষিবিজ্ঞানীরা এমন জাত বেছে নিতে পারবেন, যেগুলো বেশি শিকড় বাড়ায় অথচ ফসলের ফলন কমায় না। পরিবেশবিদরা বুঝতে পারবেন, বিভিন্ন উদ্ভিদ প্রজাতি কীভাবে একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা বা সহযোগিতা করছে। ভবিষ্যতে হয়তো কৃষি শুধু খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রই হবে না, বরং পৃথিবীর এক বিশাল কার্বন ভাণ্ডার হয়ে উঠবে।
তবে কিছু বিপত্তি রয়ে গেছে। প্রতিটি উদ্ভিদের জন্য আলাদা সন্ধায়ক তৈরি করতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ এবং জটিল। সংকর প্রজাতির ডিএনএ বিশ্লেষণেও সমস্যা আছে। কিন্তু একবার সন্ধায়ক লাইব্রেরি বড় হয়ে গেলে, পদ্ধতিটি আরও দ্রুত ও সহজে প্রয়োগ করা যাবে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই পদ্ধতি আগে থেকেই চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিরল পরিব্যক্তি বা রোগজীবাণু শনাক্ত করার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই কৃষি ও পরিবেশে এর ব্যবহার স্বাভাবিক অগ্রগতি। এ প্রযুক্তি ভবিষ্যতে এমন ফসল তৈরি করতে সাহায্য করবে, যেগুলো মাটির গভীরে বেশি কার্বন জমা রাখবে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কৃষি বড় ভূমিকা পালন করতে পারবে। এখন আমরা প্রথমবারের মতো মাটির নীচে লুকানো জগতকে চোখে দেখতে পারছি নষ্ট না করেই।

সূত্র :Digital PCR enables direct root biomass quantification and species profiling in soil samples by Nurbanu Shynggyskyzy , et.al ; Plant Physiology, Volume 198, Issue 3, July 2025, kiaf276, https://doi.org/10.1093/plphys/kiaf276.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − eight =