তপ্ত ধরণী

তপ্ত ধরণী

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৮ মে, ২০২৫

পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস-এর সীমা অতিক্রম করেছে। ফলে এটাই অনুভূত হচ্ছে যে সংকট ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসের বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বিজ্ঞানীদের গভীর উদ্বেগে ফেলেছে। নতুন বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে এটি ছিল দ্বিতীয় উষ্ণতম এপ্রিল, যা বিশ্ব উষ্ণায়নের বিপজ্জনক প্রবণতাকে আরও সুস্পষ্ট করছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৫ সালের এপ্রিল মাস ১৮৫০ থেকে ১৯০০সালের গড় তাপমাত্রার তুলনায় প্রায় ১.৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি উষ্ণ ছিল, যা ২০২৪ সালের এপ্রিলের রেকর্ডের প্রায় সমান গরম ছিল। ২২ মাসের মধ্যে ২১মাসই তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি উষ্ণ ছিল, যা প্যারিস চুক্তিতে নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘনের ইঙ্গিত দেয়।
বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবারের এল নিনো/ আবহাওয়ার শীতল প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম অনুভূত হয়েছে। ফলে, বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন যে এল নিনো বা আবহওয়ার উষ্ণপ্রভাব ফিরে আসলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা লক্ষ্য করেছেন যে ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ৪% অঞ্চল তাদের সর্বোচ্চ এপ্রিল তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। ভূমিতে উষ্ণতা নতুন রেকর্ড গড়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রাও তৃতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু অংশের তাপমাত্রা নজিরবিহীন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
২০২৫ কি সবচেয়ে উষ্ণ বছর হতে যাচ্ছে? বর্তমান ডেটা(উপাত্ত) অনুযায়ী, ২০২৫ সালের সবচেয়ে উষ্ণ বছর হওয়ার সম্ভাবনা ১৮% এবং দ্বিতীয় স্থানে আসার সম্ভাবনা ৫৩%। এছাড়া, প্যারিস চুক্তির ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের সীমারেখা অতিক্রম করার বার্ষিক সম্ভাবনা ৫২%, যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের মাত্রাকে আরও স্পষ্ট করছে।
ইউরোপেও তাপমাত্রা স্বাভাবিক মাত্রার ওপরে রয়ে গেছে, যদিও কিছু অঞ্চলে তুলনামূলকভাবে কম উষ্ণতা নথিভুক্ত করা হয়েছে। আন্টার্কটিকার পশ্চিম অংশে উষ্ণতার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে, তবে পূর্ব আন্টার্কটিকায় তুলনামূলক শীতলতা বজায় ছিল।
আর্কটিক অঞ্চলের সামুদ্রিক বরফ ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৩% কমে গেছে, যা ইতিহাসে ষষ্ঠ সর্বনিম্ন। আন্টার্কটিকায় বরফের পরিমাণ ১০% কমেছে, যা সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।
বিশেষজ্ঞরা গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোকে জলবায়ু সংকটের প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। পাশাপাশি, বনাঞ্চল বৃদ্ধি, উপকূলীয় অঞ্চল সংরক্ষণ, এবং টেকসই শক্তির ব্যবহারকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন।
তবে, বর্তমান তথ্য বলছে—সময়ের ব্যবধান ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। বিশ্ব উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে আনতে যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা না হলে, ভবিষ্যতে তাপমাত্রার ক্রমবর্ধমান রূপ আরও ধ্বংসাত্মক হতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একযোগে সহযোগিতা ও এর জন্য কার্যকরী সিদ্ধান্ত এই সংকট মোকাবেলায় একমাত্র সমাধান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 − 4 =