গাছেদের মধ্যে কিছু বিরল প্রজাতি, হয়তো বা তার একমাত্র সদস্য বেঁচে আছে সারা পৃথিবীতে। এদের মধ্যে সব প্রজাতিকেই বাঁচালে ভালো হয় – কিন্তু সে স্বপ্ন সুদূরপরাহত।
বিশ্বম্ভরন সারাসান। এই ব্যক্তিকে চিনে নেওয়া যাক আগে। লন্ডনের অদূরে কিউ, সেখানেই রয়্যাল বটানিক গার্ডেনের একজন উদ্ভিদবিদ তিনি।
আর নাম শোনা যাক একটা তাল গাছের। ল্যাটিন নাম হায়োফোর্ব আমারিকলিস। মরিশাসে কেবলমাত্র এর দেখা মেলে, কিওরপাইপ বটানিক গার্ডেনে। সারাসান বছরের পর বছর অপেক্ষা করে ছিলেন এই গাছটার কাছে পৌঁছানোর অনুমতি পেতে। পৃথিবীর বিরলতম এই তালগাছের নিচে গজানো ফার্নের উপর বসে সারাসানের একটা দরকারি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ছিল। বহু কায়ক্লেশে এ গাছের ফল নিয়ে যাওয়ার অনুমতি তিনি পেয়েছেন। একেকটা ফল, ফলের ভেতর একেকটা অমূল্য বীজ। ন’ মিটার লম্বা গাছে ৫০টা সবুজ ফল। কটা ফল নেওয়া যায়, সারাসান ভাবলেন। কিউতে ফিরে রয়্যাল গার্ডেনে যত্ন করে পালন করা যাবে, সহকর্মীদের সাহায্যও পাওয়া যাবে। শেষমেশ দশটা ফল বিশ্বম্ভরন নিয়েছিলেন, ১০ তার লাকি নাম্বারও নয়।
শুধু জঙ্গল কেটে ফেললেই যে গাছেদের কবর খোঁড়া হয় তাই নয়, আরও কারণ আছে। দুনিয়ার তিনভাগের এক ভাগ গাছেরা ইতিমধ্যেই কোনও না কোনোভাবে বিপন্ন। স্তন্যপায়ী, পাখী, উভচর আর সরীসৃপ গোষ্ঠী মিলিয়ে যত প্রাণী বিরল, তার চেয়ে দ্বিগুণ সংখ্যার উদ্ভিদ আজ ধ্বংসের পথে। উল্টোদিকে গণহারে বৃক্ষরোপণের সমস্যা হল এই, যে তাতে বেশিরভাগ প্রজাতিই উপেক্ষিত।
বটানিক গার্ডেন কন্সারভেশান ইন্টারন্যাশানালের প্রধান পল স্মিথ যদিও হাল ছাড়তে নারাজ। এই সংস্থার মূল কার্যালয় লন্ডনে। তারা পৃথিবীর বিপন্ন উদ্ভিদ প্রজাতিগুলোকে বাঁচাতে তৎপর। যদিও সময় খুব কম এবং তা কমছে। জলবায়ুর পরিবর্তন আর বাস্তু সংরক্ষণে নিত্যনতুন ফ্যাশানের আমদানিতে এই মহতী উদ্যোগ বিশবাঁও জলে।
অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন খ্যাতনামা জীববৈচিত্র্য বিশেষজ্ঞ পিটার ব্রিজওয়াটার। ওনার মতে প্রত্যেকটা বিপন্ন গাছের জন্য স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশ খুঁজে পাওয়া দুস্কর। কারণ, আবহাওয়ার তালগোলে সহজাত বাস্তুতন্ত্র একেবারে পাল্টে গেছে। সুতরাং সব গাছ বাঁচিয়ে রাখার প্রস্তাব যারা দিচ্ছেন, তা নেহাতই আকাশকুসুম।