দাঁতের যত্নে স্ট্রোক প্রতিরোধ

দাঁতের যত্নে স্ট্রোক প্রতিরোধ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৮ নভেম্বর, ২০২৫

মুখগহ্বরের পরিচ্ছন্নতা / মৌখিক স্বাস্থ্যবিধি ইতিমধ্যেই ডিমেনশিয়া ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে প্রমাণিত হয়েছে। অর্থাৎ , নিয়মিত দাঁতের যত্ন নেওয়া শুধু সুন্দর ঝকঝকে হাসি বা শ্বাস তরতাজা রাখার জন্য নয়। সম্প্রতি জানা গেছে এটি মস্তিষ্ক ও হৃদয়ের সুস্থতার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যারোলাইনা পরিচালিত এক দীর্ঘ ২১ বছরের গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের একই সঙ্গে মাড়ির রোগ এবং দাঁতের ক্ষয়ের ফলে গর্ত হয়ে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে , তাদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ।

এযাবৎ হওয়া গবেষণাগুলোতে এই দুটি সমস্যা আলাদা আলাদা ভাবে স্ট্রোকের সঙ্গে সম্পর্কিত বলেই দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এই গবেষণাটি প্রথমবার দেখিয়েছে —দাঁতের ক্ষয় ও মাড়ির রোগ একসঙ্গে থাকলে ঝুঁকির মাত্রা বহুগুণ বেড়ে যায়। আর তাই গবেষকরা বিশেষভাবে সেইসব ব্যক্তির ওপর নজর দেন যারা একই সঙ্গে উভয় সমস্যায় ভোগে।

গবেষণায় ৫,৯৮৬ জন প্রাপ্তবয়স্কের স্বাস্থ্যের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। যাদের গড় বয়স ছিল ৬৩ বছর। এই অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কারোরই আগে ইস্কেমিক স্ট্রোক (রক্ত জমাট বাঁধার কারণে যে স্ট্রোক হয়), হৃদরোগ বা অন্য গুরুতর হৃদরক্ত সংবহন তন্ত্র সম্পর্কিত রোগের সমস্যা ছিল না।

প্রায় ২১ বছর ধরে সংগৃহীত এই স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় – যাদের দাঁত ও মাড়ি সুস্থ ছিল, তাদের মধ্যে মাত্র ৪.১% স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। যাদের শুধুমাত্র মাড়ির রোগ ছিল, সেখানে স্ট্রোকের হার ৬.৯%। আর, দাঁতের ক্ষয় ও মাড়ির রোগ একসঙ্গে থাকলে স্ট্রোকের হার বেড়ে ১০% হয়। বয়স, ওজন ও ধূমপানের মতো সাধারণ ঝুঁকির উপাদান বাদ দিলে দেখা যায়—মাড়ির রোগে আক্রান্তদের স্ট্রোকের ঝুঁকি ৪৪% বেশি। আর দাঁতের ক্ষয় ও মাড়ির রোগ উভয়েই আক্রান্তদের ঝুঁকি ৮৬% বেশি।

 

 

গবেষকরা বলছেন, যদিও এটি একটি সম্পর্ক নির্দেশ করে, কারণ নয়, তবু ধারণা করা হয় যে মুখের ব্যাকটেরিয়া ও প্রদাহ শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে, ফলে রক্তনালীতে প্লাক/ জীবাণুর পুরু আস্তরণ তৈরি হয়। এবং তা রক্তজমাট বাঁধিয়ে ইস্কেমিক স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়ায়।

আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, যাঁরা নিয়মিত দন্তচিকিৎসকের কাছে যান, পরামর্শ মানেন তাঁদের দাঁতের ক্ষয় ও মাড়ির রোগ একসঙ্গে হওয়ার ঝুঁকি ৮১% কম, এবং শুধুমাত্র মাড়ির রোগের ঝুঁকি ২৯% কম।

এই গবেষণার প্রধান লেখক ও নিউরোলজি বিভাগের প্রধান ড. সৌভিক সেন বলেন,

দাঁতের যত্ন নেওয়া শুধুমাত্র হাসির সৌন্দর্যের জন্য নয়—এটি মস্তিষ্কের সুরক্ষার সঙ্গেও জড়িত। দাঁতের ক্ষয় বা মাড়ির রক্তপাত দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত। কারণ, দাঁতের যত্ন ঠিকঠাক নেওয়া হলে এটি ভবিষ্যতে স্ট্রোক প্রতিরোধেও সাহায্য করতে পারে।

 

এখন সময় এসেছে আমাদের নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর। দন্তচিকিৎসা কেবলই দাঁত রক্ষার জন্য নয়। মনে রাখতে হবে মুখের স্বাস্থ্য মানেই সামগ্রিক স্বাস্থ্য। নিয়মিত দাঁত মাজা, দাঁত পরিষ্কার করার সুতো বা ডেন্টাল ফ্লস দিয়ে দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাবারের টুকরোকে পরিষ্কার করা এবং দন্তচিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে দাঁত তো রক্ষা পাবেই, পাশাপাশি এই স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলিকে স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবেও বিবেচনা করা উচিত।

 

সূত্র: Combined Influence of Dental Caries and Periodontal Disease on Ischemic Stroke Risk by Stefanie Wood, Lawson Logue,et.al; published in Neurology Open Access, 22nd October,2025.

https://doi.org/10.1212/WN9.0000000000000036

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 8 =