প্রাণীরা প্রকৃতিতে খুঁটিনাটি নানা বিষয়ে এমনভাবে অভিযোজিত হয়েছে, যাতে সে নিজের বাসস্থান, অভ্যাসের সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারে। মজার বিষয় হল স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, সরীসৃপ, সামুদ্রিক প্রাণীরা খাবার সময় বাদে যখন জলে ভ্রমণ করে তারা এমন গভীরতায় সাঁতার কাটে, যাতে তাদের শক্তি ক্ষয় কম হয়। প্রাণীরা জলের মধ্যে যে গভীরতায় সাঁতার কাটে, তাতে জল প্রতিরোধ হ্রাস পায় আর তারা শক্তি সংরক্ষণ করতে পারে। সোয়ানসি এবং ডেকিন ইউনিভার্সিটির এই গবেষণায় কিম্বার্লি স্টোকস, প্রফেসর গ্রায়েম হেইস এবং ডাঃ নিকোল এস্টেবানের নেতৃত্বে পাঁচটা দেশের ছটা প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছিল। তাঁরা বিভিন্ন সামুদ্রিক কচ্ছপ, পেঙ্গুইন এবং তিমিদের সাঁতারের গভীরতা অধ্যয়ন করেন। গবেষকরা দেখেন, এই প্রাণীগুলো সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তাদের দেহের দৈর্ঘ্যের প্রায় তিনগুণ গভীরতায় ভ্রমণ করে। এই গভীরতা হল ‘সুইট স্পট’, যা সমুদ্রপৃষ্ঠের ঢেউ আর প্রাণীদের জলের মধ্য দিয়ে চলা উল্লম্ব দূরত্ব উভয়ই কমিয়ে দেয়। আবার ভোঁদড় ধরনের স্তন্যপায়ী প্রাণী, মিঙ্ক হল আধা-জলজ প্রাণী। যারা জলের পৃষ্ঠে সাঁতার কাটে, সেখানে তরঙ্গ তৈরি করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে শক্তি নষ্ট করে। সামুদ্রিক পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী, সরীসৃপ যারা দীর্ঘ-দূরত্ব অতিক্রম করে অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়, তাদের জন্য শক্তি-দক্ষ গভীরতায় সাঁতার কাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তাদের ভ্রমণের জন্য শক্তি খরচ কম হয়। দীর্ঘদিন ধরেই জানা ছিল, ভ্রমণকারী বস্তু তার ব্যাসের তিনগুণের বেশি গভীরতায় গেলে সৃষ্ট তরঙ্গের জন্য অতিরিক্ত টান হ্রাস পায়। কিন্তু ট্র্যাকিং করার সীমাবদ্ধতার জন্য বন্য প্রাণীদের ভ্রমণের গভীরতা তুলনা করা বেশ কঠিন কাজ।
ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস (PNAS) এর প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস (PNAS)-এ প্রকাশিত এই গবেষণায়, ছোট পেঙ্গুইন এবং লগারহেড কচ্ছপের ক্ষেত্রে তাদের সাঁতারের গভীরতা প্রাণী-বাহিত ক্যামেরা থেকে মোশন ডেটা ও ভিডিও ফুটেজ দেখে ১.৫ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। এর সঙ্গে দীর্ঘ-দূরত্বের স্থানান্তরের জন্য গ্রিন সী টার্টেল, পেঙ্গুইন ও তিমির উপগ্রহ ট্র্যাকিং ডেটা এবং অন্যান্য গবেষণার ডেটার তুলনা করা হয়েছিল। দেখা গেছে, এই প্রাণীগুলো শিকার করার জন্য বা দীর্ঘ দূরত্ব পাড়ি দেওয়ার সময় পদার্থবিজ্ঞানের পূর্বাভাস অনুযায়ী সর্বোত্তম গভীরতায় সাঁতার কাটে। সোয়ানসি ইউনিভার্সিটির ডক্টর কিম্বার্লি স্টোকস বলেছেন, অবশ্যই এমন উদাহরণ রয়েছে যেখানে প্রাণীর সাঁতারের গভীরতা অন্যান্য কারণ দ্বারা চালিত হয়, যেমন শিকার সন্ধান করা। দেখা গেছে শিকার করে না এমন সামুদ্রিক প্রাণীরা পূর্বাভাস অনুযায়ী নির্দিষ্ট গভীরতায় সাঁতার কাটে৷ গবেষকরা জানিয়েছেন, ৩০ সেমি থেকে ২০ মিটার দৈর্ঘ্য পর্যন্ত নানা প্রাণীদের ডেটা ট্র্যাক করে সাঁতারের গভীরতা ও শরীরের আকারের মধ্যে এই সম্পর্ক স্থাপিত করা গেছে।