ধ্যান ক্ষতিকারকও হতে পারে – জানাচ্ছে গবেষণা

ধ্যান ক্ষতিকারকও হতে পারে – জানাচ্ছে গবেষণা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৬ জুলাই, ২০২৪
ধ্যান

চাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার টনিক হল ধ্যান। কোথাও না গিয়েও আপনি বিনামূল্যে বাড়িতে ধ্যান অনুশীলন করতে পারেন। এখন সামাজিক মাধ্যম, নেটে ধ্যান নিয়ে খুঁজলেই নানা ভিডিও পাওয়া যায়, তাই সকলের কাছেই এটা বেশ সহজলভ্য। আর আমরা সব সময়ে শুনতে অভ্যস্ত ধ্যান আমাদের মনের জন্য, মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে কতটা উপযোগী। কিন্তু কিছু গবেষণা অন্য কথা বলছে, ধ্যানের নাকি নেতিবাচক প্রভাব থাকতে পারে। বৌদ্ধ ধর্ম থেকে উদ্ভূত ধ্যান আমাদের চেতনা, বোধ, অনুভূতি সম্পর্কে সচেতন করে। ভারতে দেড়হাজার বছর আগে এর প্রথম নথিভুক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের এক সম্প্রদায় দ্বারা রচিত ধর্মাত্রাতা ধর্মগ্রন্থে ধ্যানের বিভিন্ন অভ্যাস বর্ণনা করে ধ্যানের পরে হতাশা এবং উদ্বেগের নানা লক্ষণ দেখা দিতে পারে তার উল্লেখ করা হয়েছে। ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক এবং বৌদ্ধ শিক্ষক রোনাল্ড পার্সার তার ২০২৩ সালে প্রকাশিত বই ম্যাকমাইন্ডফুলনেসে লিখেছেন যে মননশীলতা এক ধরনের “পুঁজিবাদী আধ্যাত্মিকতা” হয়ে উঠেছে। শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই, ধ্যানের মূল্য ২.২ বিলিয়ন ডলার। আর মাইন্ডফুলনেস ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ধ্যানের সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত। গত আট বছরে এই নিয়ে নানা গবেষণা হয়েছে। এইসমস্ত গবেষণায় ধ্যানের প্রতিকূল প্রভাবও দেখা গেছে। ২০২২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়মিত ধ্যান করেন এমন ৯৫৩ জনের মধ্যে দশ শতাংশেরও বেশি প্রতিকূল প্রভাবের সম্মুখীন হয়েছেন। আর এটা তাদের দৈনন্দিন জীবনে মাস খানেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল বলে তারা জানান। ২০২০ সালে প্রকাশিত ৪০ বছর যাবত গবেষণার পর্যালোচনা জানাচ্ছে এর থেকে উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা হতে পারে। তার পরে বিভ্রান্তিকর উপসর্গ, বিচ্ছিন্নতা, ভয় বা সন্ত্রাস আসতে পারে।
রিসার্চ চ্যারিটি ওয়েলকাম ট্রাস্টের বিপুল অর্থায়নে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালে স্কুলের শিশুদের নিয়ে এক গবেষণা হয়েছিল। এই গবেষণায় যুক্তরাজ্যের ৮৪টা স্কুলে ১১-১৪ বছর বয়সী ৮০০০-এরও বেশি শিশু যুক্ত ছিল৷ এর ফলাফল জানাচ্ছে নিয়ন্ত্রণ গোষ্ঠীর তুলনায় ধ্যান শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে ব্যর্থ হয়েছে আর যাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি রয়েছে তাদের পক্ষে ক্ষতিকারকও হতে পারে। ধ্যান যারা শেখান তাদের মধ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে বিশেষ ধারণা নেই আর তারা এটা মোটেও বিশ্বাস করেন না। তাদের ধারণা ধ্যান করলে শুধুমাত্র ভালো হয়। কীভাবে নিরাপদে ধ্যান অভ্যাস করা যায় তা নিয়ে সবেমাত্র সচেতনতা গড়ে উঠছে। যেহেতু ধ্যান বিভিন্ন চেতনার স্তরে কাজ করে, আর এ নিয়ে আমাদের বিশেষ জানা নেই তাই এর থেকে ক্ষতি হতে পারে। ১৯৭৬ সালে, জ্ঞানীয়-আচরণগত বিজ্ঞান আন্দোলনের একজন প্রধান ব্যক্তিত্ব, আর্নল্ড লাজারাস বলেছিলেন ধ্যান নির্বিচারে ব্যবহার করলে বিষণ্নতা, রাগ, এমনকি সিজোফ্রেনিয়ার মতো গুরুতর আচরণের সমস্যা হতে পারে। মননশীলতা মানুষের পক্ষে মঙ্গলকারক হলেও, এর সমস্যা হল যে মাইন্ডফুলনেস কোচ, ভিডিও, অ্যাপস বা এ নিয়ে বই মানুষকে এর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে বিশেষ সতর্ক করে না। কভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সপেরিমেন্টাল সাইকোলজির সহযোগী অধ্যাপক মিগুয়েল ফারিয়াসের মতে যদি ধ্যানকে সুস্থতা বা থেরাপিউটিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে হয়, তাহলে জনসাধারণকে এর ক্ষতির সম্ভাবনা সম্পর্কেও জানাতে হবে।