যুগ যুগ ধরে মানুষ তার স্বাচ্ছন্দ্য, প্রয়োজনীয়তা ও ভোগবৃদ্ধির স্বার্থে নিজের চারপাশকে বস্তুগতভাবে উন্নত করে চলছে। চারপাশের পরিবেশকে বদলে দিচ্ছে। পরিবেশের নগরায়ন সেই ভাবনা থেকেই সৃষ্ট এবং তার সফল বাস্তবায়নে মানুষ বহুযুগ ধরেই ব্যস্ত নগরায়নের আধুনিকীকরণে। কিন্তু এই নগরায়নে একইসঙ্গে বিবর্তন হছে পরিবেশেরও। পরিবেশ মানে, মানুষের চারপাশে থাকা উদ্ভিদ প্রজাতিরও। সম্প্রতি জার্নাল সায়েন্স আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে টরন্টো মিসিসাগা বিশ্ববিদ্যালয় ও ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানীদের করা এক যৌথ গবেষণা। ২৬টি দেশের ১৬০টি শহরে ২৮৭ জন বিজ্ঞানী যুক্ত ছিলেন গবেষণায়। তারা পর্যবেক্ষণ করেছেন উদ্ভিদ প্রজাতিকে, নমুনা সংগ্রহ করেছেন শহরগুলোয় এবং পাশের শহরাঞ্চলগুলো থেকে। দেখেছেন শহর ও শহরাঞ্চলে জন্মে বেড়ে ওঠা উদ্ভিদ প্রজাতিও নিঃশব্দে বিবর্তিত হচ্ছে। টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ডক্টরেট ছাত্র জেমস সানতাঞ্জেলো। এই গবেষণায় প্রথম থেকে যুক্ত ছিলেন। বলেছেন, “আমরা শহরগুলোকে আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী কী সুন্দরভাবে বদলে ফেলেছি, কিন্তু খেয়াল করিনি যে কখন আমাদের চারপাশের পরিবেশ ও ইকো-সিস্টেমও নিঃশব্দে বদলে গিয়েছে।”
গবেষকরা এই গবেষণায় বেছে নিয়েছেন সাদা ক্লোভার ফুলকে। বিজ্ঞানীদের মতে সাদা ক্লোভার এমন এক ফুল যা টরন্টো থেকে টোকিও-সর্বত্র পাওয়া যায় এবং এই ফুলের বৈশিষ্ট্য, শহর ও শহরাঞ্চলই সাদা ক্লোভারের বাসস্থান। বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গিয়েছে সাদা ক্লোভার হাইড্রোজেন সায়নাইড উৎপন্ন করে। নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য, বিশেষত জলের অভাব দেখা দিলেও। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, শহরে থাকা একটা সাদা ক্লোভার যে পরিমাণ হাইড্রোজেন সায়নাইড উৎপন্ন করে তার চেয়ে শহরাঞ্চলে বেড়ে ওঠা একটি সাদা ক্লোভারের থেকে অনেক বেশি পরিমাণে হাইড্রোজেন সায়নাইড বেরয়। বিজ্ঞানীদের মতে এর কারণ, শহরাঞ্চলে বেড়ে ওঠা সাদা ক্লোভারকে শহরাঞ্চল থেকে শহরে রূপান্তরিত হওয়ার যে নগরায়ন প্রক্রিয়া চলে মানুষের হাত ধরে, তার সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করে যেতে হয়। আর এক গবেষক মারিনা আলবার্তি। শহরের নকশা ও পরিকল্পনা সংক্রান্ত অধ্যাপক। বলেছেন, “এই গবেষণা আমাদের পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিল, নগরায়নের প্রতিফলনে অসংখ্য উদ্ভিদ প্রজাতি ও প্রাণীদের প্রজাতির মধ্যেও বিবর্তন হচ্ছে। এই উদ্ভিদ প্রজাতি ও প্রাণীরা কিন্তু ইকো-সিস্টেমের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।” মারিনার আসল উদ্বেগ, “যে উদ্ভিদ প্রজাতি আর প্রাণীদের উপস্থিতি মানুষকেই নিরাপদে রাখে ইকো-সিস্টেমের ভারসাম্য বজায় রেখে, সেই ইকো-সিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্রের ওপরও কিন্তু কম প্রভাব পড়ছে না। নগরায়নের রূপ যত তীব্র হবে বাস্তুতন্ত্র তত খারাপ হবে। মানুষও ক্রমশ বিপন্ন হতে থাকবে।”