নতুন কৃষি বিপ্লবের পরিকল্পনা

নতুন কৃষি বিপ্লবের পরিকল্পনা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৭ জুন, ২০২৫

আজকের পৃথিবীতে, একটি প্রশ্ন ক্রমশ তীব্র হচ্ছে-খাদ্য না প্রকৃতি? কৃষিকাজে একচেটিয়া জমি ব্যবহার, বিষাক্ত সার ও কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত প্রয়োগ, বনাঞ্চল ও প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের ধ্বংস-সব মিলে যেন বন্যপ্রাণ ও প্রজাতি বৈচিত্র্য পিছিয়ে পড়ছে ভয়ানক গতিতে। এই ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বেরিয়ে আসার এক চমকপ্রদ পথ দেখিয়েছেন ব্রিটেন ও স্পেনের একদল বাস্তুতাত্ত্বিক। যুক্তরাজ্যের সেন্টার ফর ইকোলজি অ্যান্ড হাইড্রোলজি ও স্পেনের আলকালা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত জমির ২০% প্রকৃতির জন্য ছেড়ে দেওয়া দরকার। আর বাকি ৮০%-তে কৃষিকাজ চালালেও কিছু কৌশলগত পরিবর্তন আনলেই প্রকৃতি ও খাদ্য দুইয়ের সহাবস্থান সম্ভব। গবেষক জেমস বুলক ব্যাখ্যা করেন, “জীববৈচিত্র্য হ্রাস ও বাস্তুতন্ত্রের অবক্ষয় শুধরে না নিলে ভবিষ্যতের খাদ্য সুরক্ষা বিপদের মুখে পড়বে। রিওয়াইল্ডিং বা প্রাকৃতিক পুনরুদ্ধার আর কৃষি-এই দ্বৈরথকে ভাঙার সময় এসেছে। আমরা প্রমাণ করতে চাই, দুটোকে একত্রে এক সুতোয় বোনা যায়।” এই প্রস্তাবিত চার-ধাপের পথ-পরিকল্পনা যেন কৃষির ‘রেনেসাঁস ’! প্রথমত, জমির অন্তত ২০% ছেড়ে দিতে হবে প্রকৃতির জন্য—বনভূমি, জলাভূমি, ঘাসভূমি, যার মধ্যে বন্যপ্রাণ গড়ে তুলবে তার নতুন ঘর। দ্বিতীয়ত, সেগুলোর মধ্যে সংযোগ রাখতে হবে সবুজ পথ দিয়েই- ঝোপঝাড়, পুকুর, যেখানে প্রাণীরা চলাফেরা ও প্রজনন করতে পারে। তৃতীয়ত, চাষের ভেতরেই তৈরি করতে হবে বন্যপ্রাণ-বান্ধব ক্ষুদ্র পরিসর যেমন ফুলের ফিতে, গুবরে পোকার আশ্রয় বা জৈবিক কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ, কিংবা পাখিদের জন্য কাঠের খুঁটি। চতুর্থত, প্রতিদিনের কৃষি অভ্যাসে আনতে হবে পরিবর্তন। কমাতে হবে রাসায়নিক ব্যবহার, বাড়াতে হবে পরাগায়নের উপযোগী ফুল আর গবাদি পশুর ঘাসচারণ, যাতে মাটির স্বাস্থ্য ফেরে ও প্রাকৃতিক বীজ ছড়িয়ে পড়ে। এইসব শুধু প্রাণীদের বাঁচানোর গল্প নয়, কৃষকদের জন্যও স্বস্তির বার্তা। ভালো মাটি মানেই জল ও পুষ্টি ধরে রাখা অর্থাৎ ভালো ফসল। অন্যদিকে পরাগকারী ও কীটখাদক প্রাণী ফিরলে সার ও বিষনাশকের ব্যবহার কম হবে। এতে কৃষি-খরচও কমবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হল কেবল বড়ো বড়ো খামার নয়, ছোট কৃষকেরাও একত্রে কাজ করলে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। সরকারের তরফে মিলতে পারে ট্যাক্স ছাড় কিংবা পরিবেশ -পরিষেবার জন্য অর্থ। সব অঞ্চলে বাঘ বা বাইসন ফিরবে না, কিন্তু বনবিড়াল, খরগোশ কিংবা ভাম বেড়াল ফিরলেও বাস্তুতন্ত্রের ঘূর্ণি আবার জেগে উঠতে পারে। এই গবেষণা মূলত একটি আহ্বান- কৃষি আর প্রকৃতি মুখোমুখি না দাঁড়িয়ে বরং একে অপরের হাত ধরে চলুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × five =