
স্ট্যানফোর্ড মেডিসিনের গবেষকরা এমন এক নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন যেখানে স্টেম সেল প্রতিস্থাপনের জন্য আর বেদনাদায়ক কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন ব্যবহার করতে হচ্ছে না। সম্প্রতি নেচার মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত প্রথম পর্বের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, ব্রিকুইলিম্যাব নামের এই অ্যান্টিবডি শিশুদের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
এই ট্রায়ালটি মূলত ফ্যানকোনি অ্যানিমিয়া নামের এক বিরল জিনগত রোগে আক্রান্ত শিশুদের ওপর চালানো হয়। এ রোগ হলে শরীর রক্ত তৈরির ক্ষমতা হারায়, এবং সাধারণত কেমো বা রেডিয়েশন ব্যবহার করে প্রতিস্থাপনের প্রস্তুতি নিলে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়। তিনজন শিশু রোগীকে এই নতুন অ্যান্টিবডি-ভিত্তিক চিকিৎসা দেওয়া হয়, এবং দুই বছর পরও তারা সুস্থ আছে।
গবেষক দলের সহ-নেত্রী ডা. আগনিয়েস্কা চেচোভিচ জানান, এ পদ্ধতিতে সম্পূর্ণভাবে রেডিয়েশন ও বাসুলফান নামের কেমো বাদ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। একই সঙ্গে স্টেম সেল দাতার সংখ্যাও বাড়ানো গেছে। আগে পুরোপুরি মিল না থাকলে অনেক রোগী দাতা পেতেন না। এখন অর্ধ মিল থাকলেও অভিভাবকের কাছ থেকেও স্টেম সেল নেওয়া সম্ভব হচ্ছে। বিশেষ পদ্ধতিতে বিপজ্জনক টি-সেলগুলো বাদ দেওয়ায় প্রতিস্থাপনের পর রোগীর শরীরে দাতার কোষ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমেছে।
এই পদ্ধতির প্রথম সফল রোগী ছিল টেক্সাসের ১১ বছর বয়সী রাইডার বেকার। প্রতিস্থাপনের পর তার শারীরিক অবস্থার লক্ষনীয় উন্নতি হয়েছে। প্রতিস্থাপনের আগে সে এতটাই দুর্বল ছিল যে স্বাভাবিকভাবে খেলাধুলাও করতে পারত না। কিন্তু চিকিৎসার পর আজ সে স্কুলে ফুটবল খেলে, পিকলবল খেলায় সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে উঠে এসেছে। তার মা আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, “আগে রোগ তাকে আটকে রাখত, এখন সে মুক্ত।” গবেষকদের আশা, তার মতো আরও অসংখ্য শিশু এই নতুন চিকিৎসার সুফল পাবে।
ফ্যানকোনি অ্যানিমিয়া রোগীরা সাধারণত ১২ বছরের মধ্যেই অস্থিমজ্জার সমস্যার শিকার হয়। তাদের জন্য স্টেম সেল প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হলেও, পুরোনো পদ্ধতিতে ক্যান্সার ও অন্যান্য জটিলতার ঝুঁকি ছিল প্রবল। নতুন অ্যান্টিবডি-ভিত্তিক পদ্ধতিটি এই ঝুঁকি রীতিমতো কমিয়েছে। ট্রায়ালের ফলাফলে দেখা যায়, প্রতিস্থাপনের ৩০ দিনের মধ্যেই নতুন স্টেম সেলগুলো পুরোপুরি কাজ শুরু করে, এবং দুই বছর পর রোগীদের রক্তকোষ প্রায় একশোভাগই দাতার কোষ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়।
যদিও চিকিৎসার সময় শিশুদের হাসপাতালে দীর্ঘ সময় থাকতে হয়েছে এবং অস্থায়ী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (যেমন- চুল ঝরা, ক্লান্তি, বমি) ছিল, তবুও অভিভাবকেরা নতুন পদ্ধতিকে এক আশীর্বাদ হিসেবেই দেখছেন।
বর্তমানে, দ্বিতীয় পর্বের ট্রায়াল চলছে, এবং বিজ্ঞানীরা আশা করছেন এই পদ্ধতি ডায়মন্ড-ব্ল্যাকফ্যান অ্যানিমিয়ার মতো অন্যান্য জিন ঘটিত রোগেও কার্যকর হবে। ক্যান্সার রোগীদের ক্ষেত্রে এখনও কিছু ক্ষেত্রে কেমো বা রেডিয়েশন প্রয়োজন হতে পারে, কিন্তু বয়স্ক ও দুর্বল রোগীদের জন্য এই অ্যান্টিবডি চিকিৎসা বড় আশা জাগাচ্ছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, স্ট্যানফোর্ডের এই উদ্ভাবন ভবিষ্যতে স্টেম সেল প্রতিস্থাপনকে আরও নিরাপদ, কার্যকর ও সহজলভ্য করে তুলবে।
সূত্র: “Irradiation- and busulfan-free stem cell transplantation in Fanconi anemia using an anti-CD117 antibody: a phase 1b trial” by Rajni Agarwal, Alice Bertaina, et.al; 22.7. 2025, Nature Medicine.
DOI: 10.1038/s41591-025-03817-1