নতুন ফ্যাব্রিক উপাদান ভবিষ্যতে গরম ও শীতল করার ক্ষেত্রে শক্তি সাশ্রয় করবে

নতুন ফ্যাব্রিক উপাদান ভবিষ্যতে গরম ও শীতল করার ক্ষেত্রে শক্তি সাশ্রয় করবে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ জুলাই, ২০২৩

গ্রীষ্মের দিনে প্রখর রোদে গাড়ির ভিতরে দারুণ গরম হয়ে যায়। এক ধরনের নতুন ফ্যাব্রিক উপাদান তৈরি করা হয়েছে যা ঢাকা দিলে গাড়ি এবং অন্যান্য বস্তুকে গ্রীষ্মে ঠান্ডা এবং শীতকালে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করতে পারে।
গবেষকদের তৈরি ফ্যাব্রিকের এই প্রোটোটাইপ “থার্মাল ক্লোক” হিসাবে কাজ করে। এই ফ্র্যাবিকের উপাদানের আস্তরণ তার নীচের স্থানকে খুব গরম বা খুব ঠান্ডা হওয়া থেকে রক্ষা করে। ১১ ই জুলাই ডিভাইসে এই ক্লোকটি নিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে।
বিশ্ব জুড়ে বাড়ি, অফিস, অন্যান্য স্থানে ব্যবহৃত শক্তির ৩৮ শতাংশ শক্তি খরচ হয় সেই স্থানের তাপমাত্রা গরমের সময় শীতল রাখতে বা শীতে গরম রাখতে। আর এই ৩৮ শতাংশ শক্তি হল পৃথিবীর মোট শক্তি খরচের ১২ শতাংশ। UCLA-এর একজন ফলিত পদার্থবিদ আশ্বথ রামন বলেছেন, এই থার্মাল ক্লোকের মতো উপাদান তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত করা যেতে পারে। তীব্র তাপ প্রবাহের সময় এটা যেমন আমাদের আরামদায়ক রাখতে সাহায্য করতে পারে, তেমন বিদ্যুতের কম ব্যবহারে জন্য কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হ্রাস পাবে।
থার্মাল ক্লোকের নতুন গবেষণায়, সাংহাই জিয়াও টং ইউনিভার্সিটির একজন প্রকৌশলী কেহাং কুই এবং সহকর্মীরা দুটি স্তর ব্যবহার করে ক্লোক তৈরি করেছেন। বাইরের স্তরটা সাদা সিলিকা তন্তু দিয়ে তৈরি যা আলো প্রতিফলিত করে, তাছাড়া হেক্সাগোনাল বোরন নাইট্রাইড দিয়ে লেপা, একটি সিরামিক উপাদান আছে যা অতিবেগুনী আলোকে প্রতিফলিত করে এবং তাপ মোচন করতে সাহায্য করে। একসাথে, সিলিকা ফাইবার এবং বোরন নাইট্রাইড ৯৬ শতাংশ সূর্যালোক প্রতিফলিত করতে পারে। একই সময়ে, বাইরের স্তর আশেপাশ থেকে তাপ শোষণ করে এবং সেই তাপ শক্তিকে ইনফ্রারেড আলো হিসাবে নির্গত করে, যা রেডিয়েটিভ কুলিং নামক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্লোকের নীচের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়।
যদিও ক্লোকের বাইরের স্তর তার নীচের অংশে অন্যান্য অনাবৃত এলাকার চেয়ে বেশি সময় ধরে ঠাণ্ডা রাখে, তবুও আবৃত স্থান ধীরে ধীরে সারা দিনব্যাপী উষ্ণ হয়। অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে তৈরি আভ্যন্তরীণ স্তর, সেই তাপের কিছু অংশ ভিতরে আটকে রেখে রাতে ভিতরের স্থান উষ্ণ রাখে।
গবেষকরা বেশ কিছু চরম অবস্থার সাপেক্ষে ক্লোক উপাদানের স্থায়িত্ব পরীক্ষা করেছেন। তারা ৮০০° সেলসিয়াস গরমে ফ্যাব্রিকটি উন্মুক্ত করেছেন। এমনকি তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে এটিকে চরম ঠাণ্ডায় উন্মুক্ত করেছেন। আবার রকেট উৎক্ষেপণের মতো একই পরিমাণ কম্পনের মধ্যেও একে নিয়ে গেছেন। এটিকে অ্যাসিডে চুবিয়েছেন এবং একটি বিউটেন টর্চ থেকে আগুন দিয়ে বিস্ফোরিত করেছেন। কিন্তু কোনো সময়ে এই বস্তুর গঠনে কার্যত কোনও পরিবর্তন হয়নি। তাই ভাবা হচ্ছে মহাকাশযান বা বহির্জাগতিক পরিবেশে ব্যবহার করার জন্য এই উপাদানের ফ্যাব্রিক ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্তমান গবেষণায় এটা ইলেকট্রিক গাড়ি ঢাকা দিতে ব্যবহার করা হয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন ভবিষ্যতে তারা এ নিয়ে আরো বড়ো মাপের ফিল্ড টেস্ট করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 + four =