নদীর গতিপথ পরিবর্তন কোটি কোটি মানুষের জীবন বিপন্ন করে…

নদীর গতিপথ পরিবর্তন কোটি কোটি মানুষের জীবন বিপন্ন করে…

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
নদীর গতিপথ

ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির গবেষকরা নদীর গতিপথের নাটকীয় পরিবর্তন বোঝার এক উপায় বাতলে দিয়েছেন। নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত, এই যুগান্তকারী অধ্যয়নটি নদী ভাঙনের ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়ার উপর আলোকপাত করেছে যা মানব ইতিহাসকে রূপ দিয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষকে হুমকির সম্মুখীন হতে বাধ্য করেছে। জেমস “জেক” গিয়ারনের নেতৃত্বে, আর্থ অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক সায়েন্সেস-এর (ইএএস) গবেষকরা এই প্রথম এমন পরিস্থিতির রূপরেখা প্রকাশ করেছে যা নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উন্নত স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করে, দলটি ম্যাপ করেছেন কীভাবে নির্দিষ্ট ভূমি বৈশিষ্ট্য নদীর গতিপথ পরিবর্তনের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তোলে। গিয়ারন বলেন, নদীর চারপাশের ভূ প্রকৃতি পরিমাপ করা কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ বিষয় আর তার কারণ হল ঘন গাছপালা। তাই নতুন উপগ্রহের সুবিধা নিয়ে লেজার ব্যবহার করে ভূ প্রকৃতি পরিমাপ করা হয়েছে। লিডার নামক এই প্রযুক্তিটি গাছপালা ভেদ করে ভূমির উচ্চতা পরিমাপ করে। অধ্যয়নটি এমন এক অভিনব পরিকাঠামোর সন্ধান দিয়েছে যা আগে থেকেই বলে দিতে পারবে কোথায় কখন নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করবে। নদীর ভাঙন ও গতিপথ পরিবর্তন মানব ইতিহাসে বড়ো ধরনের বহু বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছ যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক জলচক্রের পরিবর্তন এবং বন্যাপ্রবণ এলাকায় মানুষের সম্প্রসারণ বেড়ে যাওয়ায়, এটি আজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রতিপন্ন হচ্ছে। নদীর জলস্তর বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হল নদীর তলদেশে পলি জমা হওয়া। এর ফলে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে জল ছাপিয়ে যায় আর নদী তার গতিপথ পালটে নতুন পথ তৈরি করে সমুদ্রের দিকে এগিয়ে চলে। এর ফলে মারাত্মক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় কারণ সমগ্র নদীটি এমন অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় যা সাধারণত এই ধরনের জলের আয়তন ধারণ করতে সক্ষম নয়। যেমন ২০০৮ সালে উত্তর ভারতের কুশী নদীর গতিপথ সরে যাওয়ার ফলে ৩০ মিলিয়নেরও বেশি বাসিন্দাকে সরাসরি প্রভাবিত করেছিল, শত শত লোককে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিল এবং প্রচুর পরিমাণে আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল। বিজ্ঞানীদের ধারণা এর দুটি কারণ থাকতে পারে- হয় নদীর তলদেশে প্রচুর পরিমাণে পলি জমে তা প্লাবনভূমির উপরে উন্নীত হয়েছে, নয়তো নদীর উভয় পাশের জমিতে এমন ভূ প্রকৃতির সৃষ্টি হয়েছে যার ফলে নদী নতুন পথ অনুসরণ করে। গবেষকদের মতে উভয় কারণ একসাথে কাজ করে এবং নদীর অবস্থানের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে। গবেষকরা গত কয়েক দশক ধরে নদীর গতিবিধি ট্র্যাক করতে স্যাটেলাইট চিত্র ব্যবহার করে বিশ্বজুড়ে ১৭৪টি নদীর গতিপথের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। গবেষকদের মতে নদীর মধ্যবর্তী অংশের তুলনায় পর্বতশ্রেণী এবং উপকূলীয় অঞ্চলের কাছে এই ধরনের ঘটনা অনেক বেশি সাধারণ এবং পার্বত্য অঞ্চলে এবং উপকূলরেখার কাছে নদীতে পলি জমা হওয়ার প্রবণতা প্রায় ৭৪%। বন্যা সম্ভাবনার ভবিষ্যদ্বাণী করতে ব্যবহৃত মডেল ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে জলের স্তর বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দেয়, তবে নদীর গতিপথ পরিবর্তন কোনও সতর্কতা ছাড়াই ঘটতে পারে, এমনকি এমন এলাকায় যেখানে বৃষ্টিপাত প্রধান উদ্বেগের বিষয় নয়। আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা এবং এশিয়ার কম উন্নত অংশে এই মডেলটি বিশেষভাবে মূল্যবান হতে পারে বলে গবেষকরা মনে করছেন, যেখানে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের প্রবণতা অনেকবেশি এবং তার রূপও বেশ ভয়াল।