নব্য প্রস্তর যুগের ভোজনোৎসব

নব্য প্রস্তর যুগের ভোজনোৎসব

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১১ আগষ্ট, ২০২৫

নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ কীভাবে বন্য শূকরকে পাহাড় পেরিয়ে নিয়ে আসত তার লুকিয়ে থাকা ইতিহাস এখন ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এ এন ইউ) নেতৃত্বে পরিচালিত এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাগৈতিহাসিক যুগের পশ্চিম ইরানের জনসমাজ যৌথ ভোজের জন্য প্রতীকী উপহার হিসেবে দূর-দূরান্ত থেকে বন্য শূকর শিকার করে আনত।
চুম্বক কিংবা ছোট ছোট গ্লাসের মতো স্মারকদ্রব্য যেমন ছুটির হালকা স্মৃতি বহন করে, তেমনি কোনো কোনো দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত খাবারও অনেক বেশি আবেগ ও মূল্য বহন করে। উদাহরণস্বরূপ, বাঙালি পায়েস, ফরাসি চিজ, ডাচ স্ট্রুপওয়াফেলস, আর কানাডিয়ান ম্যাপল সিরাপ — এসব উপহার শুধু স্বাদ নয়, স্থানের পরিচয়কেও তুলে ধরে।

গবেষকরা প্রমাণ পেয়েছেন যে নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ অনেক দূর দূর অঞ্চল থেকে বন্য শূকর শিকার করে এনে উৎসবে অংশগ্রহণ করত। তাঁরা ১৯টি শূকরের খুলি একটি বৃত্তাকার ভবনের গর্তে সযত্নে সংরক্ষিত অবস্থায় খুঁজে পান। এই শূকরগুলোকে কেবল খাদ্য হিসেবে নয়, প্রতীকী উপহার হিসেবেও আনা হয়েছিল। যার মধ্য দিয়ে সামাজিক সম্পর্ক ও ভৌগোলিক পরিচিতি ফুটে ওঠে। ড. পেট্রা ভেইগলোভা ব্যাখ্যা করে বলেছেন, দাঁতের এনামেলের রাসায়নিক ও গঠনগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখতে পেয়েছেন, কিছু শূকরকে অন্তত ৭০ কিলোমিটার দূরবর্তী অঞ্চল থেকে আনা হয়েছিল। দাঁতের অভ্যন্তরে থাকা আইসোটোপিক স্বাক্ষর ও এনামেল- ডেন্টিনের স্তরগুলি থেকে বোঝা যায়, সবগুলো শূকর স্থানীয় নয়।
তাঁদের মতে, নব্য প্রস্তর যুগে সবচেয়ে বেশি শূকর শিকার করা হত না। এগুলো আনা হয়েছিল সম্ভবত প্রতীকী কারণে। বন্য শূকর আক্রমণাত্মক প্রাণী, তাই এদের শিকার করতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগত ।কষ্ট করে শিকার করা শূকর ভোজে উপস্থাপন করা থেকে এই ইঙ্গিত মেলে যে এ নিছক খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন নয়, বরং একটি অর্থবহ সামাজিক অনুষ্ঠান।
এই গবেষণা প্রমাণ করে যে উৎসব-অনুষ্ঠানে ভৌগোলিক তাৎপর্যপূর্ণ খাবার উপহার দেওয়া এবং তা সকলের মধ্যে ভাগ করে খাওয়ার প্রথা বহু পুরাতন। কৃষিকাজ শুরু হওয়ার আগেই, এমন ভোজ এবং সামাজিক মিলনমেলা ছিল মানব কৃষ্টির অঙ্গ। এই গবেষণার আলোকে স্পষ্ট হয়, আজকের মতোই নব্য প্রস্তর যুগের মানুষদের মধ্যেও একে অপরকে সম্মান জানাতে এবং সম্পর্ক দৃঢ় করতে খাদ্যের মাধ্যমে প্রতীকী উপহার দেওয়ার চল ছিল।

সূত্র: “Transport of animals underpinned ritual feasting at the onset of the Neolithic in southwestern Asia” by Petra Vaiglova, et al;(3.7.2025) Communications Earth & Environment.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 + 14 =