নিউট্রিনো ডিটেক্টর হিসাবে কাজ করতে পারে বনের সুবিশাল গাছ

নিউট্রিনো ডিটেক্টর হিসাবে কাজ করতে পারে বনের সুবিশাল গাছ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৮ মার্চ, ২০২৪

এই ব্রহ্মাণ্ডের একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা। নিউট্রিনো। নিউট্রিনোরা আদতে ইলেকট্রনের মতোই মৌল কণা। তাদের আর ভাঙা যায় না। তবে ইলেকট্রনের যেমন চার্জ রয়েছে, এদের তা নেই। এরা তিন ধরনের – ইলেকট্রন নিউট্রিনো, মিউওন নিউট্রিনো আর টাউ নিউট্রিনো। এরা ঘন ঘন রূপ বদলে ফেলে। ইলেকট্রন নিউট্রিনো বদলে যায় মিউওন নিউট্রিনো বা টাও নিউট্রিনোয়। বিগ ব্যাং-এর মহা বিস্ফোরণের পরপরই জন্ম হয়েছিল নিউট্রিনোর। আর জন্ম হয়েছিল আলোর কণা ফোটনের। বর্তমানে আমরা অতীত বা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যা কিছু জানতে পারি বা এত দিন জানতে পেরেছি, সে সবই আলোর সূত্র ধরে, আলোর কণা ‘ফোটন’-এর মাধ্যমে। ফোটনই এই ব্রহ্মাণ্ডকে চেনা, জানার একমাত্র ‘হাতিয়ার’ ছিল। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই নিউট্রিনোর মাধ্যমে জানা যেতে পারে সেই মহা বিস্ফোরণের পর কী কী ঘটনা ঘটেছিল। কারা কারা জন্মেছিল। জানা যেতে পারে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টির রহস্য। সুতরাং, এই কণার বিচিত্র কেরামতি চাক্ষুষ করতে গবেষকরা বানিয়ে ফেলেছেন বিশ্বের ক্ষুদ্রতম নিউট্রিনো সন্ধানী যন্ত্র বা নিউট্রিনো ডিটেক্টর। এই ডিটেক্টর খুব সংবেদনশীল হয়। উচ্চ শক্তির নিউট্রিনোর কেরামতি অধ্যয়ন করার জন্য, বিজ্ঞানীরা টাউ নিউট্রিনোকে শনাক্ত করেন। যখন এই জাতীয় নিউট্রিনো পৃথিবীর অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে, তখন এটি মিথস্ক্রিয়া করে টাউ লেপটন নামক একটি কণা তৈরি করে। যদি সেই টাউ লেপটন পৃথিবীর মাটি থেকে বায়ুমণ্ডলে ঢুকে যায়, তবে এর ক্ষয় কিছু চার্জযুক্ত কণা তৈরি করতে পারে যা রেডিও তরঙ্গ সৃষ্টি করে। এই রেডিও তরঙ্গগুলো শনাক্ত করার জন্য, বিজ্ঞানীরা একটি নির্দিষ্ট ডিটেক্টর প্রস্তাব করেছেন, যা সারা বিশ্বে ২০টি পৃথক বিস্তৃতিতে বিভক্ত মোট ২০০,০০০ অ্যান্টেনা ব্যবহার করবে। লরেন্সের কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোহিরা বলেছেন, এই ধরনের ডিটেক্টর তৈরির সাথে জড়িত বিশাল উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে তার মনে হয়েছিল এই অ্যান্টেনাগুলো যদি আগে থেকে অবস্থিত থাকত তবে সুবিধা হত। সেক্ষেত্রে গাছেদের ব্যবহার করা যেতেই পারে। পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে গাছ রেডিও তরঙ্গ শনাক্ত করতে পারে। রেডিও অ্যান্টেনা হিসাবে গাছের ব্যবহার নতুন নয়, এটি ১৯০০ সালের গোড়ার দিকের কথা। পরে, ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়, ১৯৬০ থেকে ১৯৭০ সালে মার্কিন সেনাবাহিনী জঙ্গলে রেডিও সংকেতের শ্রবণযোগ্যতা উন্নত করার জন্য প্রতিটি গাছে একটি তারের পেরেক লাগায় বা প্রতিটি গাছের কাণ্ডের চারপাশে তারের একটি কুণ্ডলী মুড়িয়ে দেয় এবং সংকেতগুলো চিহ্নিত করার জন্য ইলেকট্রনিক্সের সাথে সংযুক্ত করে। দেখা গেছে এই কয়েলযুক্ত গাছগুলো, তৈরি করা অ্যান্টেনার চেয়ে শক্তিশালী এবং স্পষ্ট সংকেত তৈরি করে। প্রহিরার মতে এই পরিপ্রেক্ষিতে কৌশলটি যুক্তিসঙ্গত কিনা তা নির্ধারণ করতে এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। বিজ্ঞানীদের অধ্যয়ন করতে হবে যে গাছগুলো খুব উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি রেডিও তরঙ্গের জন্য কীভাবে কাজ করে। বিভিন্ন ধরনের রেডিও সংকেতে কীভাবে তারা প্রতিক্রিয়া জানায় সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বোঝার জন্য গতানুগতিক রেডিও অ্যান্টেনা তৈরি করা যেতে পারে। এই গতানুগতিক রেডিও অ্যান্টেনা গাছ নয় কারণ এটি স্পষ্ট নয় যে গাছ কীভাবে রেডিও তরঙ্গের মেরুকরণ, তাদের ঢেউয়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া জানাবে। তাছাড়াও, গাছের ক্ষেত্রে এর প্রভাব এবং যে সব গাছের পাতা ঝরে যায় সে সব গাছের ক্ষেত্রে আরও গবেষণা প্রয়োজন। ধারণাটি অনুপ্রেরণাদায়ক হলেও শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানী এরিক ওবের্লার মতে এটা পরিষ্কার নয় যে গাছের বদলে, তৈরি করা অ্যান্টেনা প্রতিস্থাপন করলে বেশি সমস্যার সৃষ্টি হবে না সমস্যার সমাধান হবে। তাছাড়াও ডিটেক্টর প্রতিস্থাপন বনের উপর কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা তা দেখতে হবে। সুতরাং এই ধরনের একটি আবিষ্কার অবশ্যই প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা উচিত; অন্যথায়, এই ধারণাটি উপযোগী নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 5 =