নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব এখন একাধিক দেশে শিশুদের প্রভাবিত করছে

নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব এখন একাধিক দেশে শিশুদের প্রভাবিত করছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩

নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের বেশ কিছু অংশে শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাবের খবর সম্পর্কে আমরা সবাই কম বেশি ওয়াকিবহাল আছি। খবরটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ বছরের এই সময়ের জন্য রোগের প্রাদুর্ভাব স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। বাবা মায়েরা রোগ এবং রোগীর উপর সজাগ দৃষ্টি রাখছেন আর জনস্বাস্থ্য আধিকারিকরা বিশ্বব্যাপী শিশুদের মধ্যে শ্বাসযন্ত্রের গুরুতর সংক্রমণের ঘটনা এবং কারণগুলো পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে বলা যায়, এই প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কোনও নতুন ভাইরাস বা অন্য ধরণের নতুন প্যাথোজেন নেই।
নিউমোনিয়া হল ফুসফুসের প্রদাহ, সাধারণত ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাল সংক্রমণের কারণে ঘটে এবং ফুসফুসের গভীরে থাকা কলাকে প্রভাবিত করে । অন্যদিকে ব্রঙ্কাইটিসে শ্বাসনালী প্রভাবিত হয় এবং জ্বর, শ্বাসকষ্ট এবং বুকে ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়, যা বুকের এক্স-রেতে সাদা ছায়া হিসাবে দেখা যায়। এই মরসুমে এবং বছরের এই সময়ে, রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) এবং মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া ব্যাকটেরিয়া বেশ প্রত্যাশিত। মাইকোপ্লাজমার প্রাদুর্ভাব কয়েক বছর অন্তর অন্তর ছড়িয়ে পড়ে এবং সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হতে পারে। বেশিরভাগ সংক্রামিত শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ফ্লু-এর মতো উপসর্গ দেখা দেয় যেগুলো কয়েকদিন পরে নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়, কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফুসফুসের আরও গুরুতর প্রদাহে পরিণত হতে পারে যার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এখন প্রশ্ন হল কেন কিছু মানুষের ক্ষেত্রে রোগটি গুরুতর আকার নেয়? এবং এই ঋতুতে কোনো পার্থক্য আছে কিনা ?
ছোটো ছোটো সুস্থ শিশুরা একে অপরের থেকে শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসে সংক্রামিত হয় যাতে তাদের ইমিউন সিস্টেম ভবিষ্যতে একই ধরনের জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে। আরএসভি, অ্যাডেনোভাইরাস, এন্টারোভাইরাস, রাইনোভাইরাস এবং করোনাভাইরাস সহ ২০০ টিরও বেশি ভাইরাস শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ ঘটাতে পারে। ছোটোরা যারা পূর্বে অনুরূপ সংক্রমণের সম্মুখীন হয়নি তাদের মধ্যে লক্ষণগুলো আরও গুরুতর হতে পারে। একটি নতুন প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রায় এক সপ্তাহ সময় লাগে।
সংক্রমণ কমে যাওয়ার পরে, ভবিষ্যতের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য মেমরি সেল বা স্মৃতি কোশগুলো থেকে যায়। এই মেমরি কোশের জন্য নতুন করে আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে ভাইরাস পরিবর্তিত হতে থাকে। এই বছর প্রত্যাশিত ভাইরাল সংক্রমণের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রাক-মহামারী স্তরের উপর ভিত্তি করে রিপোর্ট করা হয়েছে। মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়ার আক্রমণও প্রত্যাশিত ছিল। শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে ফুসফুস আঘাত পেতে পারে, যা সেরে উঠতে সময় লাগে। একটি শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের পরে আরেকটি শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ এই নিরাময়ের সময়কে দীর্ঘায়িত করতে পারে, যা আরও গুরুতর লক্ষণ এবং দীর্ঘতর অসুস্থতার দিকে নিয়ে যায়। এটি বিশেষত হাঁপানি রোগীদের ক্ষেত্রে ঘটে, যাদেরকে মরসুমি সংক্রমণ এড়াতে পরামর্শ দেওয়া হয়। নিউমোনিয়া-সৃষ্টিকারী সংক্রমণ সংক্রামক। কোভিড মহামারী থেকে আমরা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ এড়াতে অনেক স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত তথ্য পেয়েছি, যার মধ্যে রয়েছে সংক্রামিত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়ানো, কার্যকর বায়ুচলাচল, মাস্ক পরা, এবং হাত ধুয়ে পরিষ্কার রাখা। তাই একাধিক প্যাথোজেনের সাথে একযোগে সংক্রমণ বিস্তার বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।