নিউরন ও বিমূর্ত ভাবনার ক্ষমতা

নিউরন ও বিমূর্ত ভাবনার ক্ষমতা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১১ মার্চ, ২০২৫

ড. রড্রিগো কিয়ান কিরোগার নেতৃত্বে একদল গবেষক এই প্রথম দেখতে পেয়েছেন মানুষের মস্তিষ্কর নিউরন কোষগুলো কীভাবে প্রসঙ্গ-বহির্ভূতভাবেই স্মৃতি সঞ্চয় করে রাখে। ‘সেল রিপোর্ট্‌স’ পত্রিকায় প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রে দেখানো হয়েছে, প্রসঙ্গ বা পরিপ্রেক্ষিত ছাড়াই নিউরন কোষগুলো বিভিন্ন মানুষ কিংবা বিভিন্ন বস্তুকে আলাদা করে চিনতে পারে। এরই ফলে তাদের মধ্যে উন্নততর এবং বিমূর্ততর সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা কিনা মানুষের বুদ্ধিমত্তার বনেদ। এর আগে জন্তুদের নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে জানা গিয়েছিল যে নির্দিষ্ট স্থান, নির্দিষ্ট বস্তুর সঙ্গে কীভাবে জড়িয়ে থাকে ধারণা। জন্তুদের ক্ষেত্রে প্রসঙ্গ বা পরিপ্রেক্ষিতটা বদলে গেলে ধারণাটাও বদলে যায়। যেমন একটা ইঁদুর ঠিক কোন্‌ জায়গায় একটা বস্তু খুঁজে পাচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে তার নিউরনগুলির আচরণ। তাই এতদিন মনে করা হত, মানুষের স্মৃতি ওই ধরনের নানান নিউরন-গুচ্ছের মধ্যে সঞ্চিত থাকে। কিন্তু ড. কিরোগার গবেষক দলের গবেষণা বলছে, পরিপ্রেক্ষিত বা প্রসঙ্গ বদলে গেলেও নিউরনদের সাড়ায় কোনো বদল হচ্ছে না। তার মানে মানুষের নিউরনের মধ্যে স্মৃতি সংকেতবদ্ধ হওয়ার মূল নীতিটা অন্যান্য প্রজাতির বিপরীত। এর গভীর তাৎপর্য আছে। আর্জেন্টিনা এবং ব্রিটেনের নয় জন মৃগীরোগীকে নিয়ে চলে তাঁদের এই গবেষণা। রোগীদের মস্তিষ্কে তড়িৎদ্বার (ইলেকট্রোড) বসানো হয়েছিল যাতে বিশেষ বিশেষ নিউরনগুচ্ছর কার্যকলাপের ওপর আলাদা আলাদা করে নজর রাখা যায়। রোগীদের ছবি দেখিয়ে দুটি গল্প বলা হল। গল্পের চরিত্র একই কিন্তু পরিপ্রেক্ষিত আলাদা। গবেষকরা জানতে পারলেন নিউরনের ঠিক কোন কোন গোষ্ঠীগুলি সক্রিয় হয়ে উঠল, কীভাবে তারা দুটি গল্পের কাহিনিতে সাড়া দিল। স্পষ্ট দেখা গেল, একটা নিউরন যদি একজন লোকের ছবিতে সাড়া দেয়, তাহলে দুটি গল্পতেই ওই লোকটির ছবির প্রতি তাদের সাড়া একই থাকছে। শুধু তাই নয়, রোগীরা নিজেরা যখন গল্প দুটি শোনালেন তখন মূল চরিত্রর প্রসঙ্গ ওঠবার কয়েক সেকেন্ড আগে ঠিক ওই মস্তিষ্কের মধ্যে সেই সুনির্দিষ্ট নিউরনগুলিই আগের মতো একই ভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে। অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় মানুষের মস্তিষ্কে স্মৃতি সঞ্চিত হয় অনেক বিমূর্ত ধরনে। আমরা ধারণাগুলোকে কিংবা আরও অনেক কিছুকে নিয়ে প্রসঙ্গ-নিরপেক্ষভাবে ভাবতে পারি। কোন প্রসঙ্গে কিংবা কোন পরিপ্রেক্ষিতে সেগুলো আগে শিখেছিলাম তা থেকে নিরপেক্ষভাবেই ভাবতে পারি। ড কিরোগা বলছেন, “এটাই হয়তো মানুষের বুদ্ধিমত্তার একটা বনেদ। এরই দৌলতে আমরা ঢের বেশি বিমূর্ত ও জটিল অনুষঙ্গ আর অনুমান-ভিত্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারি। প্রত্যেকটা ধারণাকে একটা কোনো নির্দিষ্ট পরিপ্রেক্ষিতে রেখে বিচার করতে বাধ্য হলে কিন্তু সেটা সম্ভব হত না। এক কথায় বললে মানুষ তার স্মৃতিকে প্রসঙ্গ বা পরিপ্রেক্ষিত থেকে আলাদা করে নিয়ে বিমূর্ততর ভাবনার জন্ম দিতে পারে।
সূত্র: MIM (Hospital del Mar Medical Research Institute). “Possible foundations of human intelligence observed for the first time.” ScienceDaily. ScienceDaily, 6 March 2025.

http://<www.sciencedaily.com/releases/2025/03/250306123254.htm>.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 4 =