নিয়ম ভাঙার নিয়ম

নিয়ম ভাঙার নিয়ম

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৯ আগষ্ট, ২০২৫

একটি ধাতুর কেন্দ্রীয় আয়নকে ঘিরে অন্য কতকগুলি ধাতুর সাজানো সমাহারকে বলে ‘ট্রানজিশন মেটাল কমপেক্স’। আর ‘অর্গানোমেটালিক কমপ্লেক্স’ হল সেইসব যৌগ যাদের মধ্যে একটা জৈব অণুর অন্তত একটা কার্বন পরমাণুর সঙ্গে একটা ধাতু পরমাণুর গাঁটছড়া থাকে। ‘১৮-ইলেকট্রন নিয়ম’ হল অর্গানোমেটালিক রসায়নের একটি নির্দেশিকা যা ট্রানজিশন মেটাল কমপ্লেক্সের স্থায়িত্বের পূর্বাভাস দেয়। কিন্তু ওকিনাওয়া ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষকরা এমন এক নতুন অর্গানোমেটালিক যৌগ সংশ্লেষ করেছেন যা এই নীতির বিরুদ্ধে যায়। ‘১৮-ইলেকট্রন নিয়ম’ ভেঙে তাঁরা ফেরোসিন নামক একটি লোহা-ভিত্তিক ধাতু-জৈবর এক স্থিতিশীল ২০-ইলেকট্রন সংস্করণ তৈরি করেছেন। জার্মানি, রাশিয়া এবং জাপানের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে নেচার কমিউনিকেশনসে এই বিষয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন ।

ফেরোসিন ১৯৫১ সালে প্রথম তৈরি হয়। তার আশ্চর্যজনক স্থিতিশীলতা এবং স্বতন্ত্র গঠন রসায়নের ক্ষেত্রকে রূপান্তরিত করেছিল। এর আবিষ্কার ১৯৭৩ সালে রসায়নে নোবেল পুরষ্কার এনে দেয়। ধাতু-জৈব বন্ধন বোঝার ক্ষেত্রে এ একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। ধাতু-জৈব যৌগের সম্ভাবনা অনুসন্ধানে বিজ্ঞানীদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে ফেরোসিন। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন গবেষণাটি একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির সোপান। গবেষকদলটি এমন এক সিস্টেম তৈরি করেছে যা ২০টি ভ্যালেন্স ইলেকট্রন ধারণকারী একটি ফেরোসিন-জাত পদার্থকে সফলভাবে স্থিতিশীল করেছে । এক সময় এটি অসম্ভব বলে মনে করা হত। ফেরোসিন সাধারণত রেডক্স বিক্রিয়ায় (ইলেকট্রন স্থানান্তর প্রক্রিয়া) ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এটি বরাবরই জারণ অবস্থার একটি সংকীর্ণ গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এই নতুন যৌগটিতে Fe–N (লৌহ-নাইট্রোজেন) গাঁটছড়া তৈরি করে গবেষকরা ফেরোসিনের ইলেকট্রন অর্জন করা বা হারানোর ক্ষমতা প্রসারিত করেছেন। এটি অনুঘটক এবং কার্যকরী উপকরণগুলিতে এর ব্যবহারের নতুন সম্ভাবনার সূচনা করেছে। শক্তি সঞ্চয় ব্যবস্থা থেকে শুরু করে রাসায়নিক উৎপাদনে এর প্রয়োগ বিস্তৃত হতে পারে।
এই নিয়ম-ভাঙা পথ বিজ্ঞানীদের নির্দিষ্ট, পছন্দসই বৈশিষ্ট্য সহ অণুর নকশা বানানোয় করতে সাহায্য ক’রে পরিবেশ-বান্ধব অনুঘটক এবং উন্নত নতুন উপকরণ তৈরি সহ টেকসই রসায়নের অগ্রগতির পথ প্রশস্ত করতে পারে। ফেরোসিন-জাত পদার্থগুলি ইতিমধ্যেই সৌর কোষ এবং ওষুধ থেকে শুরু করে চিকিৎসা যন্ত্রকৌশল এবং উন্নত অনুঘটক প্রভৃতি বিভিন্ন প্রযুক্তিতে কার্যকারিতার প্রমাণ দিয়েছে। গবেষক-দলটি ধাতু-জৈব মিথস্ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণকারী মৌলিক নীতিগুলি উদ্ঘাটন এবং বাস্তব-বিশ্বের বিপত্তি সমাধানে সেগুলি প্রয়োগ করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। এই গবেষণাপত্রে উল্লেখিত ২০-ইলেকট্রন ফেরোসিন-জাত পদার্থের মতো যেসব অপ্রচলিত যৌগ প্রচলিত রাসায়নিক নিয়মগুলিকে অমান্য করে তাদের প্রতি এঁরা বিশেষ আগ্রহী।

সূত্র : “From 18- to 20-electron ferrocene derivatives via ligand coordination” by Satoshi Takebayashi, Jama Ariai, Sergey V. Kartashov, Robert R. Fayzullin, Tomoko Onoue, Ko Mibu, Hyung-Been Kang and Noriko Ishizu, 7 July 2025, Nature Communications.
DOI: 10.1038/s41467-025-61343-7

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − one =