নিশাচর মাকড়সা

নিশাচর মাকড়সা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৪ জুন, ২০২৪

ব্রাজিলিয়ান বিচরণকারী মাকড়সার নটি নিশাচর প্রজাতি ব্রাজিলে দেখা যায়। তবে এর মধ্যে কিছু প্রজাতি কোস্টারিকা থেকে আর্জেন্টিনা পর্যন্ত মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকা জুড়ে পাওয়া যায়। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ রিচার্ড এস ভেটারের মতো এই মাকড়সা আসাবধনতাবশত কলা বোঝাই জাহাজে উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপে পৌঁছে গেছে। বাদামী বা ধূসর রঙের এই মাকড়সার দেহের সাইজ ৫ সেন্টিমিটার অবধি হতে পারে, আর পা নিয়ে তা মোটামুটি ১৮ সেমি হতে পারে। অনেক প্রজাতির সামনের দুটো পায়ের নীচে হলুদ কালো ডোরা কাটা দাগ দেখা যায়। এদের বিচরণকারী নাম হওয়ার পেছনে কারণ হল এরা জাল বোনে না, রাতে এরা জঙ্গলের মাটিতে শিকার ধরার জন্য ঘুরে বেড়ায়। আর জাল ফেলে বা সরাসরি আক্রমণ করে শিকার ধরে। দিনের বেশিরভাগ সময় গাছের নিচে বা ফাটলে লুকিয়ে থেকে এরা রাতে শিকার ধরতে বের হয়। এরা পোকামাকড়, অন্যান্য মাকড়সা খায় আর জানলে অবাক হবেন, ছোটো ছোটো উভচর প্রাণী, সরীসৃপ এবং ইঁদুরও খেয়ে ফেলে। ব্রাজিলীয় বিচরণকারী মাকড়সার একটি প্রজাতির ফোনুট্রিয়া বলিভিয়েনসিস এর ওপর গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে এই মাকড়সাগুলো সন্ধিপদী প্রাণী ও সরীসৃপ খায়। এই মাকড়সার কিছু স্ত্রী প্রজাতি টিকটিকি এমনকি সাপও খায়। এদের কামড় যেমন শক্তিশালী তেমন যন্ত্রণাদায়ক। কামড় এদের আত্মরক্ষা করার উপায় আর এরা তখনই কামড়ায় যদি কেউ এদের উস্কে দেয়।
জার্মানির কার্লসরুহে ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম অনুসারে ব্রাজিলীয় বিচরণকারী মাকড়সার বিষ টক্সিন, প্রোটিন আর পেপটাইডের জটিল মিশ্রণ। বিষ ক্ষতিগ্রস্থদের নিউরোমাসকুলার সিস্টেমকে প্রভাবিত করে। মানুষ এই মাকড়সার কামড় খেলে শুরুতেই প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া, ঘাম অনুভব করবে, কিন্তু ৩০ মিনিটের মধ্যে, লক্ষণগুলো শরীরের সিস্টেমে গিয়ে রক্তচাপ উচ্চ বা নিম্ন করে দেয়, হৃদস্পন্দন দ্রুত বা ধীর হয়ে যায়, বমি বমি ভাব, পেটে খিঁচুনি ধরা, শরীরের তাপমাত্রা কমা, মাথা ঘোরা, ঝাপসা দৃষ্টি, শরীরের খিঁচুনি, প্রচণ্ড ঘাম হতে শুরু করে। এই মাকড়সার কামড়ের অবিলম্বে চিকিৎসা করা উচিৎ। তবে এদের কামড় খুব মারাত্মক হওয়ার সম্ভাবনা কম, কারণ এরা বিষ শিকারের নড়া চড়া বন্ধ করতে কাজ লাগায়, তাই মানুষকে কামড়ানোর সময় এরা পুরো বিষ ঢালে না, বেশিটাই বাঁচিয়ে রাখে শিকার ধরার জন্য।

 

 

photo credit: João P. Burini