নিয়েন্ডারথাল কি মাংসাশী ছিল? প্রাচীন দাঁত উত্তর দিচ্ছে

নিয়েন্ডারথাল কি মাংসাশী ছিল? প্রাচীন দাঁত উত্তর দিচ্ছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২৪ অক্টোবর, ২০২২

মানুষের বিবর্তনে আমাদের নিকট আত্মীয়ের নাম অবশ্যই নিয়েন্ডারথাল। গত শতাব্দী জুড়ে বিজ্ঞানীরা তাদের ব্যাপারস্যাপার নিয়ে বড়ো বড়ো আবিষ্কার করেছেন। কিন্তু অমীমাংসিত প্রশ্নের তালিকাটাও বেশ লম্বা।
নিয়েন্ডারথাল গোষ্ঠী যে দক্ষ শিকারি ছিল সেটা আগেই প্রমাণিত। কিন্তু তাদের খাদ্যতালিকায় কি শাকসবজি থাকত? থাকলেও পরিমাণে কতটা থাকত? – এইসব প্রশ্নের সমাধান এতদিন হয়নি।
ইউরোপের আইবেরিয়ান উপকূল (মূলত স্পেন ও পর্তুগালে) থেকে নিয়েন্ডারথাল প্রজাতির দাঁতের নমুনা খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। সেগুলো পরীক্ষা করে ওনারা ধারণা করছেন অন্তত কিছু নিয়েন্ডারথাল হয়তো সর্বভুক ছিল। নানা গাছগাছড়া আর মাশরুম তারা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত। কিন্তু অন্য গবেষণা এই ধারণাকে মোটেই মেনে নেয়নি। ওনারা বলছেন, অন্যান্য অঞ্চলের নিয়েন্ডারথাল গোষ্ঠী হরিণ, ম্যামথ, লোমওয়ালা গণ্ডার শিকার করে খেত।
এই দ্বন্দ্ব নিরসন করতে আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটা দল নতুন পদ্ধতিতে মধ্য-প্যালিওলিথিক যুগের নিয়েন্ডারথালের দাঁতের এনামেল বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। স্পেনের গাবাসা গুহা থেকে নমুনাগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল। প্রথাগতভাবে, কোনও বিলুপ্ত প্রাণী খাদ্যশৃঙ্খলের ঠিক কোন জায়গায় অবস্থান করত সেটা বোঝার জন্যে হাড়ের কোলাজেন থেকে নাইট্রোজেনের আইসোটোপ পরীক্ষা করে দেখতেন বিজ্ঞানীরা। নাইট্রোজেন১৫ যদি নাইট্রোজেন১৪-র তুলনায় অনুপাতে বেশি থাকে, তাহলে বলা হত সংশ্লিষ্ট প্রাণী মাংস ভক্ষণ করত।
কিন্তু নতুন গবেষণায় জিংকের আইসোটোপ পরীক্ষা করে দেখা হয়েছিল। গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ফ্রেঞ্চ ন্যাশানাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চের ক্লার্ভিয়া জাওয়েন। নিয়েন্ডারথালের মোলার দাঁতের সাথে সমসাময়িক অন্য তৃণভোজী ও মাংসাশী প্রাণীর হাড়ের নমুনার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। জিংক-৬৬ আইসোটোপের পরিমাণ যত কম হবে ততই প্রাণীটার মাংসাশী হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। দেখা গেছে নিয়েন্ডারথালের দাঁতে জিংকের ঐ বিশেষ আইসোটোপ পরিমাণে নগণ্য। ফলে তারা যে মাংসাশী ছিল তা কিছুটা জোরের সাথেই বলছেন গবেষকরা।
প্রোসিডিংস অফ দ্য ন্যাশানাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স পত্রিকায় গবেষণাপত্রটা প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি।