
১৬০ মিলিয়ন বছর আগের এক জাদুকরী মুহূর্তের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ক্রেইস্যাক অঞ্চলের ‘প্লাজ ও টেরোসোর’। এখানে পাওয়া টেরোসোরের পায়ের ছাপগুলি কেবল প্রাচীন জীবাশ্ম নয়, বরং উড়ন্ত সরীসৃপদের অজানা ইতিহাস। টেরোসররা ছিল মেসোজোয়িক যুগের প্রথম সঠিকভাবে উড়তে সক্ষম মেরুদণ্ডী প্রাণী। তাদের ডানা গঠিত ছিল চতুর্থ আঙুল থেকে শরীর পর্যন্ত প্রসারিত একটি চামড়ার পর্দা দ্বারা। তবে এই পায়ের ছাপগুলি দেখে বোঝা যায়, টেরোসোররা শুধুমাত্র আকাশে রাজত্ব করত না, ভূমিতেও দক্ষতার সঙ্গে চলাফেরা করত । তাদের সামনের পায়ের আঙুলগুলির অভিমুখ এই ইঙ্গিত দেয় যে তারা চার পায়ে ভর দিয়ে হেঁটে বেড়াত। আগে মনে করা হত প্রাচীন টেরোসোররা অদক্ষভাবে হাঁটত বা কেবল পেছনের পায়ে ভর করেই চলত। কিন্তু এই আবিস্কার সেই ধারণাকে নস্যাৎ করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাথমিক টেরোসরদের আঙুল ও পায়ের হাড় ছোট এবং বাঁকা ছিল, যা গাছে চড়ার উপযোগী। পরবর্তী সময়ে, তাদের হাড়ের গঠন পরিবর্তিত হয়ে মাটিতে হাঁটার উপযোগী হয়। এই পরিবর্তন তাদের মাটিতে দক্ষভাবে চলাফেরা করতে সাহায্য করে এবং নতুন পরিবেশে অভিযোজিত হতে সক্ষম করে। এমনকি টেরোসোররা অবতরণের সময় আধুনিক পাখিদের মতো “ফ্ল্যাপ-স্টল” কৌশল ব্যবহার করত। ফ্ল্যাপ-স্টল হল, পাখি ডানা ঝাপটাচ্ছে বটে, কিন্তু বায়ুপ্রবাহ ঠিকমতো ডানার উপর দিয়ে চলতে না পারায় উড়ানটা ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে না। ফলে সে উড়তে পারছেনা বা হঠাৎ নীচের দিকে নেমে আসছে। টেরোসোররা প্রথমে পেছনের পা দিয়ে মাটি স্পর্শ করত, তারপর সামনের পা দিয়ে স্থিতি অর্জন করে চার পায়ে হেঁটে যেত। এই প্রক্রিয়া থেকে বোঝা যায়, তারা অবতরণে অত্যন্ত দক্ষ ছিল এবং তাদের নিউরোমাস্কুলার (স্নায়ুর পেশী) নিয়ন্ত্রণ আধুনিক পাখিদের সমতুল্য ছিল। পায়ের ছাপগুলি ১৫০ মিলিয়ন বছর আগের সমুদ্রতটের কাদামাটিতে সংরক্ষিত হয়েছে, যা তখনকার জীববৈচিত্র্যের একটি জানালা খুলে দেয়। এখানে টেরোসোর ছাড়াও ডাইনোসর, কচ্ছপ, কুমির এবং কাঁকড়ারও ছাপ পাওয়া গেছে, যা সেই সময়ের পরিবেশের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরে। প্রাচীন টেরোসোররা ছিল বহুমুখী ক্ষমতার অধিকারী। গবেষণার তথ্যগুলি আমাদের টেরোসোরদের জীবনযাপন ও আচরণ সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।