পাথরের ডিম পাড়া পাহাড়…

পাথরের ডিম পাড়া পাহাড়…

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

চিনের গুইজ়োউ প্রদেশের গুলু জ়াই গ্রামে এক ভূতাত্ত্বিক ঘটনা বছরের পর বছর ধরে স্থানীয় এবং পর্যটকদের বিস্মিত করে। সেখানে চ্যান দা ইয়া নামের একটি পাহাড় নাকি পাথরের ডিম পাড়ে। চিনের দক্ষিণ-পূর্বের এই গ্রামের রহস্যময় পাহাড় সম্প্রতি সকলের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। স্থানীয় বসবাসকারীদের মতে পাথরের এই ডিমের ওজন প্রায় ৬৬০ পাউন্ড। এই পাথরের ডিমগুলো প্রতি ত্রিশ বছরে একবার পাহাড় থেকে পড়ে, যদিও বিজ্ঞানীরা এখনও এই ঘটনার জন্য একটি নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। পাহাড়টি আকারে ছোটো, মাত্র ৬ মিটার চওড়া এবং দৈর্ঘ্যে ২০ মিটার। আকারে ছোটো হলেও পাহাড়টি রহস্যে ঘেরা কারণ প্রতি ত্রিশ বছরে এটি পাথরের ডিম পাড়ে। স্থানীয়দের মতে, পাহাড়ের সঙ্গে ‘দৈব ক্ষমতা’ জড়িয়ে রয়েছে, যার ফলে পাহাড়ের গা থেকে ‘পাথরের ডিম’ আছড়ে পড়ে। কথিত আছে কোনও ভাগ্যবান ব্যক্তি এই মাটিতে গড়িয়ে পড়ে থাকা ডিমে হোঁচট খায়। এই ঘটনাটি শত শত বছর ধরে চলে আসছে। স্থানীয় যারা এই ধরনের গল্প শুনে বড়ো হয়েছে তারা প্রায়শই এই পাথরের ডিমের আশায় ওই পাহাড়ের কাছে ছুটে যায়। এই ডিম সৌভাগ্য ফিরিয়ে আনে বলে স্থানীয়দের ধারণা। ডিমের ব্যাস ২০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার। গাঢ় নীল রঙের মসৃণ এই ডিমের বেশ কয়েকটি এত ঝকঝকে যে সূর্যের আলো প্রতিফলিত করতে পারে। কিছু ডিমের ওজন ৬০০ পাউন্ডেরও বেশি। পাহাড়ের অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে বলে স্থানীয়দের বিশ্বাস থাকলেও ভূতত্ত্ববিদেরা এই ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। পাহাড়ের চূড়াটি অতিব সাধারণ একধরনের চুনপাথর দিয়ে তৈরি যা প্রায় ৫০ কোটি বছর আগে ক্যামব্রিয়ান যুগে গঠিত হয়েছিল। কিন্তু ডিমগুলো শক্ত, ভারি পলি জমা হয়ে গঠিত হয়েছে। মনে করা হয় দীর্ঘস্থায়ী বৃষ্টিপাত বা আকস্মিক ভূমিধসের সময় পাহাড়ের গা ওই ডিমগুলোর চেয়ে দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ডিমের এই গোল আকার সম্ভবত প্রবাহিত জলের কারণে, তবে কীভাবে বা কেন এগুলো তৈরি হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। এই ডিম খুব শক্ত একপ্রকার প্রতিরোধী শিলা দিয়ে তৈরি। অনুমান করা হচ্ছে ডিমগুলো সিলিকন ডাই অক্সাইড বা ক্যালসিয়াম কার্বনেট দিয়ে গঠিত এবং নরম শিলার একটি ম্যাট্রিক্সের মধ্যে প্রথিত থাকে। সময়ের সাথে সাথে, বৃষ্টি বা ভূমিধসের মতো আবহাওয়ার কারণে পাহাড়টি ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার সাথে সাথে এই শক্ত পাথরের গঠনগুলো আরও উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং অবশেষে পাহাড় থেকে গড়িয়ে নীচে পড়ে। মনে হয় যেন ওই পাহাড় ডিম পাড়ছে। নানা রকম বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সত্ত্বেও কোনও তথ্যই প্রমাণিত হয়নি। ‘পাথরের ডিমের’ রহস্য এখনও আড়ালে রয়েছে।

 

Image: News Flash – Sound of Hope/ Screenshot via YouTube