পানাভ্যাসের বিবর্তনী ইতিহাস

পানাভ্যাসের বিবর্তনী ইতিহাস

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২০ আগষ্ট, ২০২৫

আমাদের পূর্বপুরুষ প্রাইমেটরা বুঁদ হয়ে থাকত বুনো গন্ধযুক্ত পচা ফলের নেশায়। সেই পুরনো নেশাই হয়তো আমাদের শরীরের আজকের মদ্য বিপাক ক্রিয়ার গোড়ার গল্প। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ডার্টমাউথ এবং সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ‘Scrumping’ নামের এক নতুন শব্দ চালু করেছেন। মানে হল বনজঙ্গলে মাটিতে পড়ে থাকা পাকা বা পচা ফল খুঁজে খাওয়া। শুনতে সাধারণ মনে হলেও, এই অভ্যাস আমাদের বিবর্তনের গভীরে প্রোথিত। নৃতত্ত্ববিদ নাথানিয়েল ডমিনি বলছেন, এতদিন আমরা শুধু গাছের ফল খাওয়ার দিকটাই লক্ষ করতাম। কিন্তু মাটিতে পড়া ফলের প্রতি আকর্ষণ- এই ছোট্ট বিষয়টিই খুলে দিয়েছে এক বিশাল জিনগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত। ২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের এবং আফ্রিকান বানরের এক সাধারণ পূর্বপুরুষে এমন এক জিনগত পরিবর্তন হয়েছিল, যার ফলে তারা ৪০ গুণ বেশি দক্ষতায় অ্যালকোহল বিপাক করতে পারত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সব বানরই কি এই স্ক্রাম্প করে? উত্তর, না। শিম্পাঞ্জি, গরিলা-এরা নিয়মিত স্ক্রাম্প করে, কিন্তু ওরাংওটাংরা করে না। আর সেখানেই প্রমাণ মেলে পূর্বসূরির অ্যালকোহল-বিপাক ক্ষমতার পার্থক্যের।

স্ক্রাম্পিং শুধু বনভূমির গল্প নয়, এ আমাদের কৃষিভিত্তিক সভ্যতারও শিকড়। ১ কোটিরও বেশি বছর আগে গরিলা-মানুষ-শিম্পাঞ্জির সাধারণ পূর্বপুরুষের এই ফল-নেশাই পরবর্তীতে এমন এক অভিযোজন তৈরি করে, যা মানুষকে অন্য প্রজাতির থেকে আলাদা করে দেয়। আমরা মদ বিপাক করতে শিখলাম, তারপর একদিন সেটা বানিয়েও ফেললাম। ফল? কৃষিযুগ, সভ্যতা, নগর, রাষ্ট্র। শিম্পাঞ্জিরা দিনে প্রায় ১০ পাউন্ড ফল খায়। এই বিশাল ফলাহার মানে তারা প্রতিদিন একটা স্বল্প মাত্রার মোদো পানাভ্যাসে থাকে। গবেষকরা বলছেন, এটা শুধু শারীরিক অভিযোজন নয়, সামাজিক আচরণও। ঠিক যেমন আমরা বন্ধুবান্ধব নিয়ে পান করি, তেমনি ওদের মধ্যেও স্ক্রাম্পিং হয়তো এক সামাজিক বন্ধনের সুযোগ- এমনটাই বলছেন সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ক্যাথরিন হোবাইটার। এর প্রভাব আমাদের মনেও গভীর। তাহলে “Scrumping” শব্দটা কি জনপ্রিয় হবে? ডমিনি বলছেন, “যদি এটা বৈজ্ঞানিক আলোচনায় কাজে লাগে, তবে তা আপনাআপনিই টিকে যাবে। ঠিক যেমন ‘symbiosis’ বা ‘meme’ টিকে গেছে।” তাহলে বলাই যায়, মানুষ আগে থেকেই অ্যালকোহল খাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছিল। বানানোর আগেই তা বিপাক করতে শিখেছিল। আর এর পেছনে আছে সেই পচা গন্ধযুক্ত ফলের প্রতি নেশাগ্রস্ত টান। বনজ রহস্যের ফাঁকে মদের গল্পটা হয়তো অনেক পুরনো, অনেক গভীর। তাই স্ক্রাম্পিং শুধু একটা শব্দ নয়, এ যেন বিবর্তনের পানশালা!

 

সূত্র : “Fermented fruits: scrumping, sharing, and the origin of feasting” by Nathaniel J Dominy, et.al ; BioScience(31 July 2025) DOI: 10.1093/biosci/biaf102

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four − 1 =