পিঁপড়ে যখন সার্জেন

পিঁপড়ে যখন সার্জেন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৫ জুলাই, ২০২৪
পিঁপড়ে

এতদিন জানতাম মানুষই পারে তার উন্নত বুদ্ধি প্রয়োগ করে নিজেকে ভালো রাখতে, সুস্থ রাখতে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল আমাদের সব জানা সত্যি নয়। সম্প্রতি জানা গেছে পিঁপড়েরাও পিছিয়ে নেই। তারাও জানে কীভাবে নিজেদের ক্ষত সারিয়ে তুলতে হয়। ফ্লোরিডা কার্পেন্টার পিঁপড়েরা তাদের সহকর্মীদের জীবন রক্ষা করতে অস্ত্রোপচার করেছে। এমন কথাই জানাচ্ছে কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত এক অধ্যয়নের ফলাফল। মানুষের পরে জীবজগতে এরাই প্রথম যারা সহকর্মীর প্রাণ বাঁচাতে চিকিৎসা করেছে। বিজ্ঞানীরা এদের নাম দিয়েছেন ক্যাম্পোনোটাস ফ্লোরিডানাস। গবেষকরা দেখেছেন এই পিঁপড়েরা তাদের পরিবারের অন্য পিঁপড়ের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষত শনাক্ত করে, তা পরিষ্কার করে বা অঙ্গচ্ছেদ করে তার চিকিৎসা করে। এর আগে ২০২৩ সালে দেখা গেছে আফ্রিকার একটি পিঁপড়ের প্রজাতি, মেগাপোনেরা অ্যানালিস, তাদের গ্রন্থিতে তৈরি হওয়া একটি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল পদার্থ দিয়ে তাদের বাসায় বসবাসকারী অন্য পিঁপড়ের সংক্রামিত ক্ষতর চিকিত্সা করতে পারে। কিন্তু ফ্লোরিডা কার্পেন্টার পিঁপড়ের কোনো সমতুল্য গ্রন্থি নেই, তাই গবেষকের দল দেখার চেষ্টা করেন কীভাবে তারা এই ধরনের পরিস্থিতি সামালায়। গবেষকরা এই পিঁপড়ের বিশেষত, দুধরনের পায়ের ক্ষত পর্যবেক্ষণ করেছেন- ফিমারে এবং টিবিয়ার নীচের অংশের ক্ষত। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গবেষকরা দেখেছেন ফিমারের চিকিত্সার ক্ষেত্রে প্রথমে পিঁপড়েরা তাদের মুখ দিয়ে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে তারপর বারংবার কামড় দিয়ে পা কেটে ফেলে। অন্যদিকে টিবিয়ার ক্ষতের ক্ষেত্রে তারা শুধু ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে ছেড়ে দেয়। এই ধরনের অস্ত্রোপচারের ফলে পিঁপড়েদের আয়ু ৯০ থেকে ৯৫% বৃদ্ধি পেয়েছে আর টিবিয়ার ক্ষেত্রে বেঁচে থাকার হার ১৫ থেকে ৭৫% উন্নত হয়েছে। এই ধরনের অঙ্গচ্ছেদ করতে তাদের সময় লাগে প্রায় ৪০ মিনিট। বিজ্ঞানীদের অনুমান পিঁপড়েদের গতির সীমাবদ্ধতার কারণে শুধুমাত্র ফিমারের ক্ষতকে তারা কেটে ফেলে। তারা এও মনে করেন পিঁপড়েদের ক্ষত শনাক্তকরণ এবং চিকিত্সা করার ক্ষমতা সহজাত, এবং তারা এই দক্ষতা সম্ভবত শিখে অর্জন করেনি। বিজ্ঞানীরা এখন অন্যান্য পিঁপড়ের প্রজাতি পর্যবেক্ষণের দিকে নজর দিয়েছেন বিশেষ করে যাদের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গ্রন্থি নেই, তারা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন তাদেরও এই ক্ষমতা আছে কিনা।

 

ছবি ঋণ – Bart Zijlstra