পৃথিবীর কী সত্যিই একটা বলয় ছিল?

পৃথিবীর কী সত্যিই একটা বলয় ছিল?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
prithibi

এক সময়, হয়তো পৃথিবীর একটি নিজস্ব বলয় ছিল। সেই কল্পিত বলয়টি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, সময় হিসেব করে বলতে গেলে হয়তো তার স্থায়িত্ব মাত্র কয়েক কোটি বছর। তবে সময়টা পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক রেকর্ডে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ রেখে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। এমন কথাই জানাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির গ্রহ বিজ্ঞানী অ্যান্ডি টমকিন্সের এক বিশ্লেষণ। টমকিন্স এবং তার দল অর্ডোভিসিয়ান ইমপ্যাক্ট স্পাইক নামে পরিচিত উল্কাপিণ্ডের প্রভাবের একটি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পুনর্গঠন করেছেন যা নির্ধারণ করে যে পৃথিবীর কক্ষপথে ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত একটি বলয় এই অসঙ্গতির কারণ হতে পারে। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে, এই বলয় থেকে উপাদান ধীরে ধীরে পৃথিবীতে এসে আঘাত করে। ভূতাত্ত্বিক রেকর্ড পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে উল্কাপাতের সংখ্যা সেই সময় বৃদ্ধি পায়। গবেষকরা আরও দেখেন ওই সময়ের পাললিক শিলার স্তরে উল্কাপিণ্ডের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে।
সৌরজগতে গ্রহের এই বলয়ের উপস্থিতি বিরল নয়। আমাদের সৌরজগতের চারটি দৈত্যাকার গ্রহ- বৃহস্পতি, শনি, উরেনাস ও নেপচুনের বলয় রয়েছে। মঙ্গল গ্রহেরও একটি বলয় ছিল বলে প্রমাণ রয়েছে। এখন প্রশ্ন হল- সুদূর অতীতে পৃথিবীর কী একটি বলয় থাকতে পারে?
যদি আদৌও পৃথিবীর বলয় থেকে থাকে তবে মহাকাশে এই বলয়ের চিহ্ন খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু, প্রায় অর্ধ বিলিয়ন বছর আগে অর্ডোভিসিয়ানের সময়ে, প্রায় ৪০ মিলিয়ন বছর ধরে উল্কাপিণ্ডের প্রভাব হঠাৎ করে বৃদ্ধি পায়। ঠিক ওই সময়কালে, পৃথিবীর বুকে, কাছাকাছি অবস্থিত বহু গর্ত বা ক্র্যাটার দেখা যায়। টমকিন্স এবং তার দল ওই রকম ২১টি গর্ত বিশ্লেষণ করেন। তারা এও মাথায় রেখেছিলেন যে সেইসময় পৃথিবীর সমস্ত মহাদেশ গন্ডোয়ানা নামক একটি বৃহৎ মহাদেশের অংশ ছিল যা পরবর্তী ক্ষেত্রে ভেঙে আলাদা হয়ে যায়। গর্তের অবস্থান দেখে বোঝা যায় এই উল্কাপাত শুধুমাত্র উন্মুক্ত ভূমির ৩০%-এ ঘটেছে এবং পুরোটাই নিরক্ষীয় অঞ্চলের মধ্যে। সুতরাং বলা যেতে পারে এই নির্দিষ্ট উল্কাপাত পৃথিবীর একটি ছোটো অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন একগুচ্ছ পাথর পৃথিবীর মাঝখানে প্রদক্ষিণকারী পাথরের একটি সরু বলয় থেকে সম্ভবত পৃথিবী পৃষ্ঠে পড়েছিল। একই ঘটনা সৌরজগতের অন্য গ্রহের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে। শনির বলয় অস্থায়ী, এবং তা বেশ দ্রুত গতিতে গ্রহের উপর পড়ছে। তবে টমকিন্স বলেছেন গবেষণার পরবর্তী পর্যায়ে সংখ্যাসূচক মডেলিং ব্যবহার করে এগিয়ে যেতে হবে এবং তিনি অন্যান্য বিজ্ঞানীদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।