পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র কী ঘুরে যাচ্ছে?

পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র কী ঘুরে যাচ্ছে?

বাছাই করা খবর- ২০২৩
Posted on ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৩

পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র যেমন মানুষকে বিপজ্জনক বিকিরণ থেকে রক্ষা করে তেমন ভূ-চৌম্বকীয় কার্যকলাপ যা স্যাটেলাইট যোগাযোগ এবং পাওয়ার গ্রিডের অপারেশনকে প্রভাবিত করে। বিজ্ঞানীরা বহু শতাব্দী ধরে চৌম্বকীয় মেরুগুলির গতি অধ্যয়ন এবং ট্র্যাক করে জানিয়েছেন পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র নড়াচড়া করে। এই মেরুগুলির গতিবিধির ইতিহাস পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের জ্যামিতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এমনকি উত্তর এবং দক্ষিণ চৌম্বকীয় মেরুদুটি উল্টেও যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন উত্তর চৌম্বক মেরুটি একটু নড়ছে কিন্তু তা বড়ো বিষয় নয়, কিন্তু মেরু দুটি উল্টে গেলে এই বিপরীত পরিবর্তনে পৃথিবীর জলবায়ু এবং আধুনিক প্রযুক্তিতে একটি বড়ো প্রভাব পড়বে। তবে এই বৈপরীত্য তাৎক্ষণিকভাবে ঘটবে না, এটা ঘটতে হাজার হাজার বছর সময় লাগবে।
চলন্ত বৈদ্যুতিক চার্জ থেকে চৌম্বক ক্ষেত্রগুলি উৎপন্ন হয়। পৃথিবীর তরল লোহার কোরে পরিবাহী উপাদানের স্তর পাওয়া যায়। চার্জের স্রোত পুরো কোর জুড়ে চলে, এবং তরল লোহাও চলমান এবং কেন্দ্রে সঞ্চালিত হয়। এই আন্দোলনগুলি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে। পৃথিবীতেই একমাত্র চৌম্বক ক্ষেত্র পাওয়া যায় না, বৃহস্পতি গ্রহে একটি পরিবাহী ধাতব হাইড্রোজেন স্তর রয়েছে যা তাদের চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে। গ্রহের অভ্যন্তরে এই পরিবাহী স্তরগুলির চলাচলের ফলে দুই ধরনের ক্ষেত্র তৈরি হয়। বৃহত্তর গতি, যেমন গ্রহের বড়ো আকারের ঘূর্ণন, একটি প্রতিসাম্য চৌম্বক ক্ষেত্রের দিকে নিয়ে যায় যার উত্তর এবং দক্ষিণ মেরু থাকে।
এই পরিবাহী স্তরগুলিতে ছোটো প্রবাহের কারণে কিছু স্থানীয় অনিয়মিত গতি থাকতে পারে যা বড়ো আকারের প্যাটার্ন অনুসরণ করে না। এই অনিয়মগুলি গ্রহের চৌম্বক ক্ষেত্রে কিছু ছোটোখাটো অসামঞ্জস্য প্রকাশ করে যেখানে ক্ষেত্রটি একটি নিখুঁত ডাইপোল ক্ষেত্র থেকে বিচ্যুত হবে। চৌম্বক ক্ষেত্রের এই ছোটো আকারের বিচ্যুতিগুলি সময়ের সাথে সাথে বড়ো আকারের ক্ষেত্রের পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যেতে পারে এমনকি ডাইপোল ক্ষেত্রের মেরুত্বের সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে নিয়ে যেতে পারে, যেখানে উত্তর মেরু দক্ষিণে মেরুতে পরিণত হয় ও দক্ষিণে মেরু, উত্তর মেরুতে রূপান্তরিত হয়।
বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে উপরের অংশ, আয়নোস্ফিয়ার স্তরে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র একটি চৌম্বকীয় “বুদবুদ” তৈরি করে যা ম্যাগনেটোস্ফিয়ার নামে পরিচিত। ম্যাগনেটোস্ফিয়ার মানুষের সুরক্ষায় একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে। এটি ক্ষতিকারক, উচ্চ-শক্তি, তারার বিস্ফোরণে তৈরি মহাজাগতিক-রশ্মি বিকিরণ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে এবং প্রতিবিম্বিত করে। ম্যাগনেটোস্ফিয়ার সূর্য থেকে প্রেরিত চুম্বকীয় গ্যাসের প্রবাহ, বা সৌর বায়ুর সাথেও প্রতিক্রিয়া করে।
বিজ্ঞানীরা মডেল ব্যবহার করে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সামগ্রিক আকৃতি এবং ওরিয়েন্টেশনের মানচিত্র ট্র্যাক করেন। ১৮৩১ সালে প্রথম পরিমাপ নেওয়া ও সম্প্রতি ক্ষেত্রের স্থিতিবিন্যাস এবং মাত্রার স্থানীয় পরিমাপ থেকে দেখা গেছে উত্তর চৌম্বক মেরুর অবস্থান প্রায় ৯৬৫ কিলোমিটার সরে গেছে। মাইগ্রেশন গতি প্রতি বছর ১৬ কিলোমিটার থেকে ৫৪ কিলোমিটার বেড়েছে। এই ত্বরণ ক্ষেত্রের বিপরীত দিকের সূচনা নির্দেশ করতে পারে, কিন্তু বিজ্ঞানীরা ২০০ বছরের কম তথ্য থেকে এটি নিশ্চিতভাবে বলতে পারবেন না। ভূতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে চৌম্বক ক্ষেত্রের উলটপালট দ্রুত ঘটে, যদিও মানুষ তা বুঝতে পারেনা। বিপরীতমুখী অবস্থান হতে সাধারণত কয়েক হাজার বছর সময় লাগে, এই সময়ে ম্যাগ্নেটোস্ফিয়ারের স্থানান্তর হতে পারে যা পৃথিবীকে মহাজাগতিক বিকিরণে উন্মুক্ত করতে পারে। এটি বায়ুমণ্ডলে ওজোনের ঘনত্ব পরিবর্তন করতে পারে।