পৃথিবীর চারপাশে গ্রহাণুর গতিবিধি নতুন নয়। গতির ঝড় তুলে হামেশাই শোনা যায়, ছোটো বড়ো নানান আকারের গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে। তবে পৃথিবীর একেবারে কাছাকাছি চলে আসার সম্ভাবনা এদের থাকে না বললেই চলে। তবু আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এই সব গ্রহাণুর দিকে নজর রাখে। কোনো গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে এগিয়ে এলে তা নিয়ে সতর্ক করে নাসা। তাদের আনুমানিক গতিবিধি সম্পর্কে আগে থেকে জানান দেয়। কিন্তু সম্প্রতি একটি গ্রহাণু শনাক্ত করার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গ্রহাণুটি ফিলিপাইনের আকাশে লুজন দ্বীপের উপরে উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি সৃষ্টি করে পুড়ে যায়। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পৌঁছানোর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে, নাসার ক্যাটালিনা স্কাই সার্ভে ছোটো এই গ্রহাণুটি শনাক্ত করে। নাম রাখা হয় 2024 RW1। এটির ব্যাস প্রায় এক মিটার। এই গ্রহাণু থেকে পৃথিবীতে সে রকম কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল না। গ্রহাণুটি অকস্মাৎ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আঘাত করে তবে তার আগেই বিজ্ঞানীরা সেটিকে শনাক্ত করেছেন। যদিও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে গ্রহাণুটি পৃথিবীতে আঘাত করেছে, তবে বাস্তবে এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আঘাত করেছে, যেখানে ছোটো ছোটো বস্তু পুড়ে যায়। বিজ্ঞানীদের মতে 2024 RW1 প্রতি সেকেন্ডে ১৭.৬ কিলোমিটার বেগে পৃথিবীর দিকে এগিয়ে আসছিল। এই নিয়ে নবম বার বিজ্ঞানীরা পৃথিবীতে পৌঁছানোর আগে একটি গ্রহাণু শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। যদিও ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার মতে প্রতি দুই সপ্তাহে একটি এক মিটার ব্যাসের গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত হানে। 2024 RW1 গ্রহাণুটি আকারে খুব ছোটো ছিল তাই সেটি অনুজ্জ্বল ছিল। বড়ো আকারের গ্রহাণু অনেক বেশি উজ্জ্বল তাই শনাক্ত করাও সহজ। যদিও এই গ্রহাণু থেকে বিপদের আশঙ্কা ছিল না তবে সর্বদা এমন ঘটনা ঘটে না। ২০১৩ সালে, চেলিয়াবিনস্ক উল্কা নামের একটি ১৮ টন ওজনের গ্রহাণু রাশিয়ার শহরের উপরে বিস্ফোরন ঘটিয়েছিল। ফলে ব্যাপক স্থলভূমির ক্ষতি হয় এবং প্রায় ১৫০০ ব্যক্তিকে চিকিৎসাধীন থাকতে হয়, যদিও কেউ নিহত হয়নি। পৃথিবীর ইতিহাসে এর চেয়ে অনেক বড়ো বিপর্যয় ঘটেছে যা আমাদের সভ্যতার উপর প্রভাব ফেলেছে। চিক্সুলাব ইম্প্যাক্ট্রের কারণে ডাইনোসরের বিলুপ্তি ঘটে। তবে গ্রহাণুর আকারের থেকেও গ্রহাণুর তীব্র গতি সমস্যার সৃষ্টি করে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। এই প্রতিবেদনটি ইউনিভার্স টুডে-তে প্রকাশিত হয়েছে।