পৃথিবীর সবচেয়ে পুরানো ত্রিমাত্রিক মানচিত্র

পৃথিবীর সবচেয়ে পুরানো ত্রিমাত্রিক মানচিত্র

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২২ জানুয়ারী, ২০২৫

যুগ যুগ ধরে বুদ্ধিমত্তা, কঠোর পরিশ্রম এবং ধারাবাহিকতার জোরে মানুষ যে কোনও পরিস্থিতিতেই লড়াই করে গেছে। মানুষের কাছে যে সম্পদই থাকুক না কেন, তা সে আধুনিক মানুষই হোক বা গুহায় বসবাসকারী আদিম মানুষই হোক মানুষ তার উদাহরণ স্থাপন করে চলেছে। সে দিক দিয়ে বিচার করতে গেলে আমাদের আদি পূর্বপুরুষরা অনেক বেশি উন্নত ছিলেন, আমরা তাদের কৃতিত্বের দাম দিই বা না দিই। বেঁচে থাকার জন্য যে সম্পদ তারা পেয়েছেন তা ব্যবহার করে তারা আধুনিক সভ্যতার ভিত্তি স্থাপনকারী সরঞ্জাম ও কৌশল বিকাশ করেছেন। তাদের দৈনন্দিন জীবনধারার কথা, তাদের বিশ্বাসের কথা তারা বিশদে গুহার দেয়ালে এঁকে গেছেন। শিকার ও খাদ্য সংগ্রহের জন্য যে সরঞ্জাম তারা তৈরি করেছেন তার মধ্যে দিয়ে তাদের সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা প্রকাশ পেয়েছে।
সম্প্রতি গবেষকরা ধারণা করছেন তারা বিশ্বের প্রাচীনতম ত্রিমাত্রিক মানচিত্র আবিষ্কার করেছেন। প্যারিস অববাহিকায় কোয়ার্টজ-বেলেপাথরের খোদাই করা একটি বৃহৎ পাথরের টুকরো বা মেগাক্লাস্টের মধ্যে এটি লুকিয়ে ছিল। ১৯৮০ সাল থেকে সেগোনোল ৩ রক সেল্টার তার শিল্পিসুলভ খোদাইয়ের জন্য পরিচিত। সাম্প্রতিক আবিষ্কারগুলো থেকে জানা যায় যে এই স্থানটিতে প্রায় ১৩,০০০ বছর আগে প্যালিওলিথিক বা পুরানো প্রস্তরযুগের মানুষেরা তাদের আশেপাশের পরিবেশের একটি ছোট্টো প্রতিরূপ তৈরি করেছেন। গবেষণায় অ্যাডিলেড বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং আর্থ সায়েন্সেসের ডঃ অ্যান্থনি মিলনেস এবং মাইনস প্যারিসের- পিএসএল সেন্টার অফ জিওসায়েন্সেসের ডঃ মেডার্ড থিরি অংশগ্রহণ করেন। ডঃ মিলনেসের মতে, এই ত্রিমাত্রিক ক্ষুদ্রাকৃতি বস্তুটি আধুনিক অর্থে কোনও মানচিত্রকে বোঝায় না, কারণ সেখানে দূরত্ব এবং দিকনির্দেশের সঠিক পরিমাপ দেওয়া নেই। তবে এটি চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন সুউচ্চ ভূমি থেকে নেমে আসা ঝর্ণা, নদীতে প্রবাহিত জলপ্রবাহ, উপত্যকা, হ্রদ এবং জলাভূমিকে বেশ ভালোভাবে চিত্রিত করে। গবেষণা থেকে আরও বোঝা যায় যে সম্ভবত সে যুগের মানুষদের কাছে সময় বা দূরত্বের মতো ধারণার চেয়ে জলপ্রবাহের দিকনির্দেশনা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের বৈশিষ্ট্য শনাক্তকরণ আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।