পৃথিবী বাসযোগ্য থাকার সীমা ও তার খেয়াল রাখা

পৃথিবী বাসযোগ্য থাকার সীমা ও তার খেয়াল রাখা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

পৃথিবীতে বেঁচে থাকার নটা অত্যাবশ্যক লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমের মধ্যে ছটার ক্ষেত্রে, আমরা নিরাপদ সীমা অতিক্রম করে ফেলেছি। আমাদের সৌরজগতের মধ্যে পৃথিবী হল একমাত্র গ্রহ যা বসবাসযোগ্য। যেখানে আপনি, আমি সবাই বসবাস করি। সৃষ্টির প্রথম ৮০০ মিলিয়ন বছর যাবত পৃথিবী মৃত ছিল। তারপর এতে জীবনের ছাপ পড়তে শুরু করে। তিন বিলিয়ন বছরেরও বেশি সময় ধরে, জীবনের নানা ধরন তাদের নিজস্ব পরিবেশ গঠনে সহায়তা করেছে। পৃথিবীর শক্তির ভারসাম্যস্থল হল জলবায়ু, ট্রিলিয়ন সংখ্যক প্রজাতির সাথে এর মিথস্ক্রিয়া পরিবেশগত অবস্থার প্রধান নির্ধারক।
প্রায় ১৫ বছর আগে, এই নিবন্ধের প্রধান লেখক ক্যাথেরিন রিচার্ডসন, বায়োলজিকাল ওশানোগ্রাফি- র প্রফেসর আমরা কী ক্ষতি করেছি তা স্পষ্ট করতে “প্ল্যানেটারি বাউন্ডারিস” তৈরি করেছিলেন। সেখানে পৃথিবীর সিস্টেমের জন্য অত্যাবশ্যক নটা প্রক্রিয়া আলাদা করে বলা হয়েছিল। তার মধ্যে তিনটে আমরা সিস্টেম থেকে গ্রহণ করি ও তার ভিত্তিতে যা ক্ষতি হয় তা হল- জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, মিষ্টি জলের অত্যধিক ব্যবহার, ভূমির যথেচ্ছ ব্যবহার। বাকি ছটা বর্জ্য থেকে আসে যা আমরা পরিবেশে জমা করি, গ্রিনহাউস গ্যাস – যা জলবায়ু পরিবর্তন এবং সমুদ্রের আম্লীকরণ ঘটায়, ওজোন ক্ষয়কারী রাসায়নিক, প্লাস্টিক, কংক্রিট, কৃত্রিম রাসায়নিক এবং আমাদের তৈরি জেনেটিকালি পরিবর্তিত জীব , এরোসল বা বাতাসে ভাসমান নানা রাসায়নিক ধূলিকণা, এবং পুষ্টির ফলে সার থেকে উদ্গত নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস।
আমরা অন্যান্য জীবিত প্রাণীর মতো, পৃথিবীর সম্পদ ব্যবহার করে বেঁচে থাকি। আগে আমরা বিশ্বাস করতাম এই সম্পদ সীমাহীন। কিন্তু আমরা এখন জানি এর একটা স্পষ্ট সীমা আছে। আমরা আমাদের নিজেদের লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে অবলীলায় ধ্বংস করে চলেছি এবং সম্প্রতি এই ধ্বংসের হার অতিরিক্ত। যদি আমরা এভাবে চলতে থাকি, তাহলে অচিরেই বিনাশের মুখে পড়ব। ধরে নিন ব্যবহারযোগ্য জল যা ফসল ও জীবনের জন্য অপরিহার্য, কৃষি, শিল্প বা শহরগুলোর জন্য নদী, হ্রদ এবং জলাশয় থেকে সেই জল খুব বেশি পাম্প করি তবে আমরা সেই সীমাকে আঘাত করছি। এটি নেহাত অনুমানমূলক বিষয় নয় আমাদের দেশ ভারত এবং ক্যালিফোর্নিয়ার মতো জায়গা সেই শেষ সীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
গবেষক দল খুঁজে পেয়েছেন যে আমরা এখন নটা ক্ষেত্রের মধ্যে ছটাতে নিরাপদ অঞ্চল ছাড়িয়ে বিপজ্জনক অঞ্চলে পৌঁছে গেছি। ওজোন-ক্ষয়কারী রাসায়নিকের জন্য আমরা সবুজ অঞ্চলে আছি। মহাসাগর-আম্লীকরণে, এরোসল দূষণ এবং ধুলোয় এখনও সবুজ অঞ্চলে আছি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, বন উজাড় করা, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, প্লাস্টিক ব্যবহার, মিষ্টি জলের অপচয়ে এবং নাইট্রোজেন/ফসফরাসের মতো সিন্থেটিক রাসায়নিক ব্যবহারে আমরা নিরাপদ অঞ্চলের বাইরে চলে এসেছি। এই ছয় ক্ষেত্রে আমরা লাল অঞ্চলের গভীরে প্রবেশ করেছি। ওজোন-ক্ষয়কারী রাসায়নিকগুলির জন্য আমরা যা করার চেষ্টা করছি তা অন্যান্য ক্ষেত্রের জন্য যত দ্রুত করব, আমাদের সকলের জন্য পৃথিবী তত নিরাপদ হবে।