পেট ভরে খাওয়ার পরেও কিছু মুখরোচক খেতে ইচ্ছে করে?

পেট ভরে খাওয়ার পরেও কিছু মুখরোচক খেতে ইচ্ছে করে?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৩ মার্চ, ২০২৪

দুপুরে পেট ভরে খাবার খাওয়ার পরে আমাদের অনেকেরই তার কিছুক্ষণের মধ্যে কিছু না কিছু খেতে ইচ্ছে করে, ফ্রিজ খুলে একটু মিষ্টি, চকলেট খুঁজতে থাকি। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন এটার পিছনে কিছু নিউরনের খাবার খোঁজার জন্য অতিসক্রিয়তা দায়ী। ইউসিএলএ-র মনোবিজ্ঞানীরা ইঁদুরের মস্তিষ্কে একটা সার্কিট আবিষ্কার করেছেন, যা তারা ক্ষুধার্ত না থাকলেও তাদের খাবারের আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে খাবার খোঁজায়। কোশের এই ক্লাস্টার উদ্দীপিত হলে ইঁদুরকে দিয়ে জোরালোভাবে খাবার খোঁজায়, আর মজার বিষয় হল স্বাস্থ্যকর খাবারের বদলে চকোলেটের মতো চর্বিযুক্ত এবং আনন্দদায়ক খাবার তখন তারা বেশি পছন্দ করে। নেচার কমিউনিকেশনস-এ প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে গবেষকরা অনুসন্ধান করে দেখেছেন, ইঁদুরের মস্তিষ্কেরএকটা অংশের কোশ খাদ্য-সন্ধান করে যে অংশ সাধারণত আতঙ্কের সাথে যুক্ত, কিন্তু খাওয়ার সাথে যুক্ত নয়। এই অঞ্চলকে পেরিয়াকুডাক্টাল গ্রে (পিএজি) বলা হয়, এবং এটা ব্রেনস্টেমে রয়েছে, যা বিবর্তনের ইতিহাসে অনেক পুরানো আর সে কারণে, এই অংশ মানুষ এবং ইঁদুরের মধ্যে কার্যগত দিক থেকে এক রকম হবে বলে জানিয়েছেন, ইউসিএলএ -এর সহযোগী অধ্যাপক অভিষেক অধিকারী। খাদ্য-সন্ধান মস্তিষ্কের একটা প্রাচীন অংশে নিহিত থাকার কারণ হল খাদ্যের জন্য বিভিন্ন স্থান চরে বেড়ানো সমস্ত প্রাণীরই ধর্ম।
গবেষকরা পিএজি নিউরনের এই নির্দিষ্ট ক্লাস্টার উদ্দীপিত করেন যার নাম vgat PAG কোশ। তার জন্য গবেষকরা ইঁদুরের মস্তিষ্কে একটা জিনগত প্রকৌশলী ভাইরাস ইনজেকশনের মাধ্যমে ঢুকিয়ে মস্তিষ্কের কোশে হালকা-সংবেদনশীল প্রোটিন তৈরি করিয়েছিলেন। তাকে লেজার আলো দিয়ে উদ্দীপিত করলে ইঁদুরগুলো খাবারের খোঁজে দৌড়োদৈড়ি করতে থাকে। যেকোনো গতিশীল বস্তু যেমন পিংপং বলের পেছনেও তারা দৌড়তে থাকে। বলটা তারা খাওয়ার চেষ্টা না করলেও আশেপাশে থাকা বিভিন্ন বস্তু তারা পরীক্ষা করে দেখতে থাকে। ফলাফল থেকে বোঝা যায়, ইঁদুরের আচরণ খিদের চেয়ে আকাঙ্ক্ষার সাথে বেশি সম্পর্কিত। এই কোশ সক্রিয় করে বোঝা গেছে সার্কিট খিদে সৃষ্টি করছে না। পরিবর্তে, এই সার্কিট উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত খাবারের প্রতি অত্যন্ত লোভ সৃষ্টি করে। এই কোশগুলোই ইঁদুরকে খিদের অনুপস্থিতিতেও উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়ায়। অন্য ভাইরাস দিয়ে ইনজেকশন দিয়ে এই কোশের কার্যক্ষমতা কমিয়ে তারা দেখেছেন, ইঁদুররা খিদে পেলেও খাবার খোঁজার জন্য বিশেষ ঘোরাঘুরি করছে না। এই সার্কিট কীভাবে, কী এবং কখন খেতে হবে তা ঠিক করে দিচ্ছে। ইঁদুরের মতো মানুষেরও ক্ষেত্রেও এই vgat PAG কোশ থাকে। যদি মানুষের মধ্যেও এটা একইভাবে কাজ করে তাহলে খাদ্যাভ্যাসের অসুবিধা থাকলে, এই অংশ লক্ষ্য করে চিকিৎসা করলে তা ফলপ্রসূ হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × three =