শুধু কী খেলোয়াড়দেরই পেশিতে টান ধরে? আমাদের মধ্যেও ব্যাপারটা বেশ সাধারণ। ঘুমের মধ্যে বা একটানা অনেকক্ষণ বসে বা শুয়ে থেকে ওঠার সময়ে পিঠ ও পায়ের পেশিতে টান ধরে অনেকেরই। বিশেষ করে রাতে ঘুমোনোর সময়ে পায়ের শিরায় টান ধরে যাওয়ার সমস্যা কমবেশি অনেকেরই আছে। বাড়ির বয়স্কেরা এই শিরটানের সমস্যায় বেশি ভোগেন। ইংরেজিতে একে বলে মাসেল ক্র্যাম্প। রাতে ঘুমের মধ্যে পেশিতে টান ধরে যন্ত্রণা শুরু হলে, তা কমতে অনেক সময় লাগে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কয়েক সেকেন্ড বা মিনিটের মধ্যে এই ক্র্যাম্প নিজে থেকে কমেও যায়। ২০১৭ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে, এই ধরনের পায়ের পেশিতে টান বেশ সাধারণ, এবং দেখা গেছে প্রায় ৩০% প্রাপ্তবয়স্কদের মাসে অন্তত পাঁচবার এই নাইট ক্র্যাম্প হয়। অদ্ভুত শুনতে লাগলেও সক্রিয় ব্যক্তিদের মধ্যে পেশিতে টান ধরার প্রবণতা থাকে। তবে কী শুধু রাতেরবেলায় এই শিরটান দেখা দেয়? তা নয়, দিনে যে কোনও সময়েই পেশিতে টান ধরতে পারে। সারা দিন কাজের জায়গায় বসে থাকা, নিয়মিত ব্যায়াম না করা যে কোনও কারণেই পেশিতে টান ধরতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে শিরটান আকস্মিক ঘটে যখন পেশি সংকুচিত হয়। পেশির তন্তুগুলো অতিরিক্ত উত্তেজিত হলে বা স্নায়বিক উদ্দীপনায় অথবা শরীরে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, বা ম্যাগনেসিয়ামের মতো স্বাভাবিক পেশি সংকোচনের জন্য প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রোলাইট স্তর কমে গেলে ক্র্যাম্প ধরে। তবে সামগ্রিকভাবে, বিশেষজ্ঞরা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত নন কেন কিছু সুস্থ ব্যক্তির হঠাৎ হঠাৎ পেশিতে টান ধরে আর কিছু ব্যক্তির এই ধরনের সমস্যা থাকে না। এখন প্রশ্ন হল যদি অতিরিক্ত কাজের ফলে পেশিতে টান ধরে তবে এই ধরনের ক্র্যাম্প কেন বিছানায় শুলে ঘটে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন রাতের ক্র্যাম্পের প্রক্রিয়াটি দিনেরবেলার তুলনায় আলাদা। দিনেরবেলায় পেশির ক্লান্তি, বা সক্রিয় থাকার ফলে ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতার কারণে টান ধরতে পারে। তবে গবেষকদের অনুমান রাতে আমাদের ঘুম যখন র্যাপিড আই মুভমেন্ট (REM) থেকে নন-র্যাপিড আই মুভমেন্ট বা গভীর ঘুমে রূপান্তরিত হয় তখন আমাদের পেশিতে টানের তফাতের কারণে ক্র্যাম্প ধরে। বিশেষজ্ঞদের মতে বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে স্নায়ু এবং বিপাকীয় ক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দেয় ফলে তাদের একাধিক ওষুধ খেতে হয় আর এসবই শিরটান ধরার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। পায়ের পেশিতে টান ধরার ক্ষেত্রে স্ট্রেচিং করলে সুফল পাওয়া যায়। অন্য কোনও ব্যায়াম এই সময় না করাই ভাল। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। পেশিগুলো স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে এমন কোনও কাজ না করাই ভালো, যা পেশির উপর চাপ সৃষ্টি করে। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে তবেই কাজ শুরু করা শ্রেয়।