পোষ্য যখন কুকুর

পোষ্য যখন কুকুর

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৭ অক্টোবর, ২০২৪

আজকের দিনে সবাই খুব ব্যস্ত। আত্মীয়-বন্ধুদের সঙ্গে দেখা প্রায় নেই। পরিবারও এখন ছোটো, দুজন বা তিনজন। অনেকে আবার একা থাকেন। আজ মানুষের দিনের পর দিন কাটে কাজে কর্মে, অন্যের সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ ছাড়াই। মোবাইলের যুগে অবশ্য ছেলেমেয়ের সঙ্গে কথা হয় ভিডিয়ো কলে, কিন্তু সে আর কতক্ষণ? ফলে একাকিত্ব গ্রাস করছে অনেককে। এমন অবস্থায় নিজেকে ভালো রাখার সহজ উপায় হল পোষ্য রাখা। আর কুকুরের চেয়ে ভালো পোষ্য আর কী হতে পারে। সাহচর্য ছাড়াও মনের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কুকুর পোষা ভালো। মনোবিদদের মতে কুকুর পুষলে মৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাস পায়। ২০১৯ সালে, একটি পদ্ধতিগত পর্যালোচনা ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রকাশিত প্রমাণ সংগ্রহ করে প্রায় চার মিলিয়ন মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছে যাদের কুকুর নেই তাদের তুলনায় কুকুর পোষে এমন মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি ২৪% কম। কুকুর পুষলে মনের যত্নের সঙ্গে হয় শরীরের দেখভালও। পোষ্য থাকলে তাকে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যেতেই হয়। শারীরিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায়, ফলে রক্তচাপ হ্রাস পায়, স্ট্রোক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমতে সাহায্য করে। যে সব ব্যক্তিদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে কুকুর পোষ্য হিসেবে থাকলে পরবর্তী ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৫% কমে যায়। সাম্প্রতিক আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে কুকুর পুষছেন এমন প্রাপ্তবয়স্কদের, কুকুর নেই এমন ব্যক্তিদের তুলনায় দৈনিক শারীরিক কার্যকলাপের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার সম্ভাবনা প্রায় চারগুণ বেশি। পোষ্য রয়েছে এমন পরিবারে শিশুরাও অনেক সক্রিয় এবং তারা আরও বেশি করে খেলাধূলায় নিযুক্ত। এইসব শিশুদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তিও বেশি করে গড়ে ওঠে। তবে কুকুর পোষার ক্ষেত্রে কিছু আপকারিতাও আছে। সবচেয়ে সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হল অ্যালার্জি বা বিভিন্ন ত্বকের রোগ, যেমন দাদ। কুকুরের লালা, প্রস্রাব এবং খুশকি বা ত্বকের মরা কোশ, অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে যার ফলে চোখ চুলকানো, নাক দিয়ে জল পড়া, বা শ্বাসকষ্টর মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। একটি সাম্প্রতিক মেটা-বিশ্লেষণ প্রায় দুই মিলিয়ন শিশুর তথ্য সংগ্রহ করেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে কুকুরের সাথে থাকার ফলে শিশুদের অ্যাজমার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তবে এক্ষেত্রে শিশুর বয়স, কুকুরের সাথে তাদের যোগাযোগের সময় প্রভৃতি ভূমিকা পালন করে।তাছাড়াও কুকুরের কারণে ব্যক্তিদের পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই ঝুঁকিগুলো কমানোর জন্য পোষ্যর সঠিক চিকিত্সা ও যত্ন এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন অপরিহার্য। মনে রাখতে হবে যে প্রাণীরা আমাদের সঙ্গে বাস করে তারা শুধু মানুষের স্বাস্থ্য ভালো রাখার “সরঞ্জাম” নয়। মালিক এবং কুকুর উভয়ের কল্যাণ এবং সুস্থতা বজায় থাকলে পারস্পরিকভাবে তারা উপকৃত হতে পারে।