প্রতিদিন জিভ পরিষ্কার করুন

প্রতিদিন জিভ পরিষ্কার করুন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
জিভ পরিষ্কার করুন

চিকিৎসকের কাছে গেলেই আগে তিনি রোগীর জিভ দেখতে চান কারণ, শরীরে অস্বাভাবিক কিছু ঘটলেই তার কিছু লক্ষণ ফুটে ওঠে এই জিভে। চিকিৎসকেরা এই জিভ দেখে সহজেই রোগ সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা তৈরি করে নেন। জিভের পৃষ্ঠের পরিবর্তন বা তার নড়াচড়া দেখে তারা রোগীর মুখের সমস্যার পাশাপাশি সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধারণা করতে পারেন। কিন্তু চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগেই আমাদের নিজেদের জিভের স্বাস্থ্য রক্ষা করা প্রয়োজন। চিকিৎসকদের মতে দিনে দুবার জিভ পরিষ্কার করলে জিভের স্বাস্থ্য্ যেমন ভালো থাকে তেমনই মুখের দুর্গন্ধ নিয়ন্ত্রিত হয়।
খাবার খাওয়া, কথা বলা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্রিয়াকলাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আমাদের জিভ। মোট আট জোড়া পেশির সমন্বয়ে জিভের নড়াচড়া। জিভের পৃষ্ঠ ছোটো ছোটো গঠন দ্বারা আবৃত থাকে যা দেখা যায় এবং অনুভব করা যায়। ইংরেজিতে এদের বলে প্যাপিলি, যার ফলে জিভের পৃষ্ঠ অনেকটাই রুক্ষ মনে হয়। এই গঠনগুলোকে কখনও কখনও স্বাদকোরক হিসাবে ভুল করা হয়। আমাদের জিভে প্রায় ২০০,০০০ – ৩০০,০০০ প্যাপিলির মধ্যে, শুধুমাত্র কিছু প্যাপিলিতে স্বাদ কোরক থাকে। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় ১০,০০০ স্বাদ কোরক থাকে এবং খালি চোখে এদের দেখা যায়না। স্বাদ কোরক প্রধানত জিভের ডগায়, পাশে এবং পিছনে কেন্দ্রীভূত থাকে। জিভের স্বাভাবিক রঙ লালচে গোলাপি, তবে রঙের গাঢ়ত্ব ব্যক্তি বিশেষে পরিবর্তিত হয়। জিভের কিছু অংশে সাদা আস্তরণ স্বাভাবিক হতে পারে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন বা বিবর্ণতা রোগ বা অন্যান্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। আমাদের জিভ পরিষ্কার করতে সময় লাগে প্রায় ১০-১৫ সেকেন্ড। নিয়মিত জিভের পৃষ্ঠকে টুথব্রাশ দিয়ে আলতো করে স্ক্রাব করে পরিষ্কার করা যেতে পারে। এর ফলে যেমন খাবারে অবশিষ্ট অংশ দূর হবে তেমনি জীবাণু তৈরি হওয়া প্রতিরোধ করতেও সহায়তা করবে। জিভের পৃষ্ঠে লুকিয়ে থাকা ব্যাকটেরিয়া দূর হলে নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হবে না। অনেকসময় জিভ পরিষ্কার করতে জিভ ছোলাও ব্যবহার করা যেতে পারে। সাধারণত এগুলো ধাতু বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। অনেক সুস্থ মানুষের মধ্যেও জিভের ওপরে একটা সাদা আবরণ থাকে। হালকা করে স্ক্রাবিং বা জিভ ছুলে নিলে এই আবরণ দূর করা যায়। জীবাণু দূর হলে দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়, কারণ জীবাণু অন্যান্য অঙ্গে স্থানান্তরিত হলে গুরুতর অসুস্থতার কারণ হতে পারে।
অনেক ক্ষেত্রে ছত্রাক সংক্রমণের ফলে জিভে হলুদ আস্তরণ পড়ে যায়। বয়স্ক ব্যক্তিরা যারা একাধিক ওষুধ গ্রহণ করে তাদের মধ্যে সমস্যাটি প্রকট। আবার ডায়াবেটিস রোগী অথবা শিশু ও অল্প বয়স্কদের মধ্যেও এটি দেখা যায়। অতিরিক্ত ধূমপান করলে, ক্যাফিনজাতীয় পানীয় খেলে জিভের উপর কালচে আস্তরণ পড়তে পারে। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, চড়া অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাবেও কিন্তু জিভের উপর এমন কালচে আস্তরণ পড়তে পারে। অনেকের আবার জিভ শুকিয়ে যায়। এর কারণ হতে পারে ওষুধ, ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে জেরোস্টোমিয়া। এই ওষুধের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস, অ্যান্টি-সাইকোটিকস, পেশি শিথিলকারী, ব্যথানাশক, অ্যান্টিহিস্টামিন এবং মূত্রবর্ধক।
সুতরাং সতর্ক থাকুন আর প্রতিদিন জিভ পরিষ্কার রাখুন।