টুবিনজেন ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন কীভাবে প্রতিযোগিতামূলক আবহাওয়ায় অন্য উদ্ভিদের পরিস্থিতি এবং ঘনত্ব মাপতে সক্ষম উদ্ভিদজাতি। আশেপাশের গাছেদের দৈহিক গঠন বিচার ক’রে, সেই অনুযায়ী প্রস্তুত থাকার বিদ্যে রপ্ত করেছে উদ্ভিদকুলও। ‘নেচার কমিউনিকেশনস’-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে উঠে এসেছে এমনই বিচিত্র তথ্য।
সাধারণত প্রাণীরা তাদের সামনে দাঁড়ানো প্রতিপক্ষকে মেপে নিয়েই পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ ক’রে- তা হতে পারে সম্মুখসমর, হতে পারে পালানো অথবা আঘাত সহ্য ক’রে নেওয়া। যেমন, যদি তাদের প্রতিপক্ষ বেশী শক্তিশালী এবং বৃহদাকার হয়, তবে লড়াইয়ে পরাজয় স্বীকার ক’রে নেওয়াটাই প্রাণীদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া।
পাতার ফাঁক দিয়ে আগত সূর্যরশ্মির পরিমাণগত উপস্থিতি বোঝে গাছেরা। তারা লাল ও অতিলাল বর্ণের অনুপাত নির্ণয়ে সক্ষম । সূর্যের আলো পাওয়ার নিরিখে গাছের দেহে দুই’ধরণের অভিব্যক্তি দেখা যায়- প্রথমত, তাদের উচ্চতা বৃদ্ধি ( ফলে পাশের গাছটির তুলনায় সে বেশী সূর্যালোক পায়); এবং দ্বিতীয়ত, স্বল্প আলোকে কষ্টকর ভাবে বেঁচে থাকা। কিছু গাছ,( যেমনঃ ক্লোনাল প্ল্যান্ট) এড়িয়ে যাওয়ার পদ্ধতি অবলম্বন করে। মূলত এই তিন ধরণের প্রতিযোগিতামূলক অভিব্যক্তি দেখা যায় গাছের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে, জানাচ্ছেন গবেষণাপত্রের মুখ্য আলোচক মিশেল গ্রান্টম্যান । তিনি আরও যোগ করেছেন, “ আমরা দেখতে চেয়েছিলাম যদি এই উপায়গুলির মধ্যে গাছেরা যেকোনো একটি বেছে নেয়, তাহলে তাদের পার্শ্ববর্তী গাছটির উপর কী কী প্রভাব পড়তে পারে ?”
উত্তর খুঁজতে গিয়ে গবেষকগণ ‘পোটেনশিলা রেপ্ট্যান্স’ নামক ক্লোনাল প্ল্যান্টের উপর পরীক্ষা চালান বিভিন্ন আলোকমাত্রায় । এই গাছ যখন স্বল্প ঘনত্বের পরিবেশে, এবং আনুভূমিক বৃদ্ধির পক্ষে প্রতিকূল, তখন তাদের উচ্চতা বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি হয়। অদ্ভুত ভাবে যখন এই একই গাছকে অন্যান্য দীর্ঘতর গাছের পরিবেশে পর্যবেক্ষণ করা হল, তারা উচ্চতা আর বিস্তারে বাড়তে না পেরে, আলোকহীনতা সহ্য করার ক্ষমতা বাড়তে থাকে তাদের। এবং অনুরূপভাবে যখন তারা পাশাপাশি বাড়ার সুযোগ পেল, তারা আনুভূমিক ভাবে বৃদ্ধি পেল।
এই অনুসন্ধান থেকে বোঝা যায় যে, পাশের গাছদের উচ্চতা ও ঘনত্ব অনুযায়ী তারা নিজেদের বিন্যস্ত করতে সক্ষম। এবং উপরোক্ত পদ্ধতিগুলির মধ্যে যেকোনো একটি পদ্ধতি তারা বেছে নেয়। গ্রান্টম্যান জানাচ্ছেন, “অসমসত্ত পরিবেশে বিশেষভাবে বিভিন্ন গঠন ও আকারের গাছের মাঝে একটি গাছ এভাবেই বেছে নেয় তার উদ্বর্তনের রাস্তাটি” । গবেষণা থেকে আরও বোঝা যায় যে, নিজেদের পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করে তারা সবচেয়ে ফলপ্রসূ দিকেই বেড়ে ওঠে।