প্রযুক্তির বিস্ময় পদ্মা সেতু

প্রযুক্তির বিস্ময় পদ্মা সেতু

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৫ জুন, ২০২২

খরস্রোতা পদ্মার নদী ওপর ৯ কিলোমিটার সেতু নির্মাণ ছিল প্রায় অসম্ভব এক কাজ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পদ্মা নদীর তলদেশে মাটির গভীরে পাইল বসানো ছিল সবচেয়ে কঠিন কাজ। পৃথিবীর আর কোনও নদীর ওপর সেতু বানাতে গিয়ে এত গভীরে পাইল বসাতে হয়নি। বাংলাদেশের নদীতে পাথর নেই। ফলে সেতুর পুরো ভার রাখতে হয় মাটিতে। একারণে নদীতে অনেক ভারী পাথর, কংক্রিটের ব্যাগ এবং জিও-ব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। যেসব পাথর ব্যবহার করা হয়েছে তার এক একটির ওজন ৮০০ কেজি থেকে এক টন। এসব পাথর একসাথে মিক্স করা হয়েছে যাতে ইন্টারলকিং হয়। সেগুলোকে নদীর তলদেশে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। নদীর তলদেশে যতটুকু যাওয়া সম্ভব, অর্থাৎ ড্রেজিং-এর ক্ষমতা যতোটুকু ছিল ততোটা গভীরে না, বলেছেন সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অন্যতম আইনুন নিশাত। এই কারণে আনা হয়েছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় তিনটি ড্রেজার। নদীর তলায় ৮০০ কেজির জিও-ব্যাগে মোটা বালি ভরে নীচের স্তর তৈরি করা হয়েছে।
নিশাত জানিয়েছেন, সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে দেখা গিয়েছিল বেশ কিছু পাইলের নিচে কাদামাটির স্তর। তখন কাদামাটির ওই স্তর ভেদ করে আরো গভীরে পাইলের ফাউন্ডেশন নির্মাণ করতে হয়েছে। তিনি বলছেন, এই কাজটা প্রায় অসম্ভব মনে হয়েছিল প্রথমে। “মাটির নিচে ২২৫ থেকে ২৩০ মিটার পর্যন্ত যেতে হবে। ১০ ফুট ডায়ামিটারের স্টিলের টিউবকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মাটিতে বসাতে হবে। এজন্য ২৫০০ টনের হাতুড়িও ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু সেটাও এক একবার ফেটে গিয়েছে।” বলেছেন তিনি।
তিনি বলেছেন, সেতুর ভার বহন করার জন্য যতটা গভীরে পাইল বসানোর দরকার ছিল সেটা ছিল অসম্ভব এক চ্যালেঞ্জ। এতো গভীরে যেতে হয়েছে কারণ উপরের ৬০ থেকে ৭০ মিটার শুধু জল, যেখানে পাইলের কোন শক্তি নেই। তার ওপর পদ্মার প্রবল স্রোতেও কাজ ভীষণভাবে ব্যহত হয়েছে। তবে বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের দাবি সেতু নির্মাণে পদ্মার পরিবেশ নষ্ট করা হয়নি। এমনকী ইলিশ মাছের বাস্তুসংস্থানের কোনও ক্ষতি হয়নি। এই সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। আট বছর ধরে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা, অসংখ্য শ্রমিকের শ্রমের ফসলে অবশেষে শনিবার উদ্বোধন হল পদ্মা সেতুর।