প্রাচীন কুমিরের মমি থেকে জানা গেল মৃত্যুর কারণ

প্রাচীন কুমিরের মমি থেকে জানা গেল মৃত্যুর কারণ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৯ আগষ্ট, ২০২৪
কুমির

মিশর মানেই পিরামিড, ফারাও, মমি। আর মমি বললেই আমাদের মনে পড়ে মিউজিয়ামে রাখা ব্যান্ডেজ জড়ানো একটা মানুষ। কিন্তু মিশরীয়রা নানা পশুদেরও মমি বানিয়ে রাখত! মিশরীয়দের বিশ্বাস ছিল পার্থিব এবং ঐশ্বরিক জগতের যোগসূত্রে প্রাণীদের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ভূমিকা রয়েছে। তারা মনে করত বাজপাখি সূর্য দেবতা হোরাসের সাথে সম্পর্কিত, কারণ বাজপাখি আকাশে অনেক উঁচুতে দেবতার কাছাকাছি উড়তে পারত। বিড়ালরা দেবী বাস্টেটের সাথে যুক্ত ছিল, সাহসী এবং হিংস্র প্রতিরক্ষামূলক মাতৃ ব্যক্তিত্ব হিসেবে তাদের দেখা হত। বেশিরভাগ প্রাণীর মমি দেবতাদের জন্য ভক্তিমূলক অর্ঘ বা উপহার হিসাবে তৈরি করা হত। এই সমস্ত প্রাণীদের মমি সেই সময়ের প্রাকৃতিক জগতের কিছু চিত্র তুলে ধরে। এই প্রাণীদের মমির মধ্যে কয়েকটা প্রাণী বর্তমানে আর মিশরে পাওয়া যায় না। প্রাচীনকালে মিশরে নীল নদের তীরে ইবিসেস, বাঁকা ঠোঁটওয়ালা লম্বা পাওয়ালা পাখি দেখা যেত। প্রজ্ঞা ও লেখার দেবতা থোথের কাছে নৈবেদ্য হিসেবে এই পাখিদের লক্ষ লক্ষ মমি তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে এই পাখি আর মিশরে নেই, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মরুকরণের কারণে পাখিগুলো দক্ষিণ ইথিওপিয়ায় চলে গেছে।
নীলনদের তীরে বসবাসকারী কুমিরদেরও মমি বানানো চালু প্রথা ছিল। ১৯৭০ সালে অসয়ান বাঁধ তৈরির পরে কুমিররা নীলনদের ব-দ্বীপে যেতে পারেনা। কুমিরকে নীলনদের দেবতা সোবেকের প্রতীক মনে করা হত। মনে করা হত তিনি বছর বছর নীলনদে প্লাবন আনেন, যাতে কৃষিক্ষেত্র জল ও পলিমাটিতে সমৃদ্ধ হয়। কুমিরের চামড়া পরে, বাড়ির দরজায় কুমির ঝুলিয়ে রেখে মিশরীয়রা অশুভ শক্তি বিনাশ করতে চাইত। বেশিরভাগ কুমিরের মমিই ছোটো ছোটো আকারের ছিল। তাদের ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরি করা হত। এর পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণও পাওয়া গেছে।
ইউরোপের বার্মিংহাম মিউজিয়াম অ্যান্ড আর্ট গ্যালারিতে এরকম এক কুমিরের মমি রাখা আছে যা ২.২৩ মিটার দীর্ঘ। ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাঞ্চেস্টারের গবেষকরা এই ৩০০০ বছরের পুরোনো মমির রেডিওগ্রাফি করেছেন। এক্স-রে আর সিটি স্ক্যান থেকে দেখা গেছে, কুমিরের পেটে ছোটো ছোটো পাথর রয়েছে, যাকে গ্যাস্ট্রোলিথ বলা হয়। কুমিররা হজমের সুবিধার জন্য বা প্লবতা রক্ষার জন্য এরকম পাথর খেয়ে থাকে। গ্যাস্ট্রোলিথের উপস্থিতি বোঝায় যারা মমি বানিয়েছিল, তারা আভ্যন্তরীণ অঙ্গ বাদ দেয়নি। সহজে পচন যাতে না ধরে তাই আভ্যন্তরীণ অঙ্গ বাদ দেওয়া হত। কুমিরের মাথায় চোট দেখে মনে করা হয়, মানুষ কুমিরের নড়াচড়া বন্ধ করতে মাথায় আঘাত করেছিল, তারপর কুমিরটা মারা গিয়েছিল। আশ্চর্যজনক হল কুমিরের পেটে ধাতব হুকে আটকানো একটা মাছ পাওয়া গেছে। এই মাছটাকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে কুমিরটা ধরা হয়েছিল। প্রাচীন মিশরীয় মমি বানানোর প্রথা নানা ভূপর্যটকের লেখা থেকে উঠে এসেছে। ইতিহাসে একেই প্রামাণ্য হিসেবে ধরা হত। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের প্রাচীনকালের নানা রহস্যের জট ছাড়াচ্ছে।