প্রাচীন সভ্যতার খোঁজ ক্লাইভ হাউসে

প্রাচীন সভ্যতার খোঁজ ক্লাইভ হাউসে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা।
Posted on ৬ জুলাই, ২০২২

দমদমের ক্লাইভ হাউস। লর্ড ক্লাইভের বাড়ি। দুটি মত ক্লাইভের এই বাড়ি নিয়ে। প্রথম মত, ঘোড়ায় চড়ে এখনকার দমদমের রাস্তা পেরিয়ে যেতে যেতে রবার্ট ক্লাইভ দেখতে পেলেন, বড় ঢিপির উপরে একটি পুরনো একতলা বাড়ি। সেই বাড়ি ক্লাইভ পরে দ্বিতল করেন। আর দ্বিতীয় মত, সিরাজউদ্দৌল্লা বাড়িটি তৈরি করেন কাছেই কলকাতায় ইংরেজদের উপরে গোপনে নজর রাখার লক্ষ্যে। সিরাজের পরাজয়ের পরে যা ইংরেজদের হাতে চলে যায়। কিন্তু তার চেয়েও বড় খবর লুকিয়ে ছিল ওই ঢিপিটিতে। গত শতক থেকে ওই ঢিপির প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের কলকাতা সার্কলের অধীক্ষক শুভ মজুমদার বলেছেন, “পূর্ববর্তী উৎখননে এখানে সাতটি স্তরে নাগরিক সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিল। তবে এবছরের খননকার্যে সর্বশেষ স্তরে বা প্রাক্‌-মৌর্য যুগের বন্যা এবং তারও বেশ কয়েক শতক আগের সভ্যতার নিদর্শনও পাওয়া গিয়েছে।” যা দেখে পুরাতত্ত্ববিদদের অনুমান, সেই সময়েও এখানকার মানুষের বন্যার পরে ঘুরে দাঁড়ানোর কারিগরি দক্ষতা ও মনের জোর ছিল। পুরাতত্ত্ববিদেরা জানাচ্ছেন, এখানে ধারাবাহিক ভাবে জনবসতি থাকায় মানুষ বন্যার আঘাতের পরে চলে না গিয়ে ফের এখানেই আবার বসতি তৈরি করার উৎসাহ দেখিয়েছিল। পুরাতত্ত্ববিদ রূপেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণে, “সব চেয়ে পুরনো স্তর থেকে যে নিদর্শন মিলেছে, তাতে পাওয়া কৃষ্ণাভ লাল মৃৎপাত্র থেকে অনুমান করা যায়, এই এলাকায় খ্রিস্টপূর্ব এক হাজার বছর আগেও বসতি ছিল।” অর্থাৎ, কলকাতার ইতিহাস এখন থেকে তিন হাজার বছর পুরনো। তারও এক হাজার বহর আগের সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে ওই ঢিপির খননকার্যে। এখান থেকে হাড়ের তৈরি অস্ত্রও পাওয়া গিয়েছে। তার কার্বন পরীক্ষা করা হচ্ছে। ইতিহাসবিদদের অনুমান, সেই পরীক্ষার পরে এই এলাকার ইতিহাস আরও প্রাচীন বলে গণ্য হতে পারে। পুরাতত্ত্ববিদদের মতে, প্রায় ২০০ মিটার লম্বা ও ৭০ মিটার চওড়া এই ঢিপি থেকে পাওয়া বিভিন্ন স্তরের মধ্যে সব থেকে উন্নত সভ্যতা ছিল খ্রিস্টীয় প্রথম-দ্বিতীয় শতক থেকে গুপ্ত ও গুপ্ত পরবর্তী যুগের মধ্যে। এটি ছিল একটি সমৃদ্ধ নাগরিক বাণিজ্যকেন্দ্র, যার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল ভারতের বিভিন্ন তৎকালীন বসতির।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − one =