প্রায় অন্ধকারে সালোকসংশ্লেষ

প্রায় অন্ধকারে সালোকসংশ্লেষ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সালোকসংশ্লেষের জন্য গাছের পর্যাপ্ত আলো প্রয়োজন। এতে গাছ শর্করা জাতীয় খাবার তৈরি করে, যা সারা পৃথিবীর প্রাণীর খাদ্যের প্রাথমিক উৎস। গবেষকরা জানাচ্ছেন, গাছ খুব কম আলোতেও তাদের শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ চালাতে পারে। নেচার কমিউনিকশনে জলজ মাইক্রোঅ্যালগির ওপর গবেষণায় জার্মানির গবেষকরা জানিয়েছেন, তারা আর্কটিকে জলের ৫০ মিটার নীচে আলো ক্রমশ কমিয়ে দেখেছেন গাছ কত কম আলোতে সালোকসংশ্লেষ করতে পারে। তারা দেখেছেন সালোকসংশ্লেষে সূর্যের আলোকে শক্তিতে রূপান্তর করার জন্য গাছের খুব কম আলোর প্রয়োজন হয়। মোটামুটি কম্পিউটার সিমুলেশনের সঙ্গে এই আলোর মাত্রা মিলে যাচ্ছে। মাইক্রোঅ্যালগি সর্বনিম্ন ০.০৪ মাইক্রোমোল ফোটন m⁻²/s⁻¹ আলোর স্তরে এই প্রক্রিয়া চালায়। আর কম্পিউটার সিমুলেশনের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী যে কোনও পরিস্থিতিতে সর্বনিম্ন ০.০১ মাইক্রোমোল ফোটন m⁻²/s⁻ ¹ আলোয় গাছ সালোক্সংশ্লেষ চালাতে পারবে। এই গবেষণা থেকে ঠাণ্ডা দেশের জন্য বেশ আশাজনক চিত্র উঠে এসেছে। ইউরোপে একটা পরিষ্কার দিনে বাইরের আলোর অবস্থা ১৫০০-২০০০ মাইক্রোমোল ফোটন m⁻²/s⁻¹ , যা আর্কটিক মাইক্রোঅ্যালগির সালোকসংশ্লেষের প্রয়োজনীয় আলোর তুলনায় ৩৭০০০-৫০০০০ গুণ বেশি।

নিরক্ষরেখা থেকে দূরে অবস্থিত দেশগুলো খুব কম সূর্যালোক পায় আর দীর্ঘ শীতকাল ভোগ করে, বা দীর্ঘ সময় মেঘে আবৃত থাকে। যেমন ইউরোপে এ ধরনের আবহাওয়া দেখা যায়। সালোকসংশ্লেষণের জন্য কত কম আলোর প্রয়োজন হবে তা জানা থাকলে, বিজ্ঞানীরা খুব কম আলোয় বৃদ্ধি হয়, এরকম ফসল তৈরি করতে পারবেন, যা সারাদিনে কম সূর্যালোক পায় এমন জায়গার জন্য উপযোগী হবে। জিনগত সম্ভাবনা উন্মোচন করে, অনেক ফসলের প্রজনন বা বায়োটেক পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে এ ধরনের ফসল বানানো সম্ভব। ইউরোপের মতো জায়গায় কম আলোতে সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে এমন উদ্ভিদের প্রজনন সম্ভাব্যভাবে ফসলের ফলন বাড়াবে।
ঘরের ভেতরে রাখা যায় বা গ্রিনহাউসে যে সমস্ত গাছের পরিচর্যা করা হয়, তাদের জন্য কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা থাকে, যাতে প্রচুর শক্তি খরচ হয় আর তা বেশ খরচসাপেক্ষ। এরকম স্থানে রাখার জন্য কম আলোতে সালোকসংশ্লেষ করা গাছ খুব উপযোগী হবে। গাছ বায়োইঞ্জিনিয়ারিং করে, তার স্বাদ, গন্ধ, ফলন একই রেখে কম আলোর উপযুক্ত গাছ তৈরি করা গেলে কৃত্রিম আলোর চাহিদা কমবে। এতে যেমন খরচ কমবে, তেমন কার্বন নির্গমন হ্রাস পাবে।
গবেষণার একটা দিক হল, এই ধরনের কম আলোয় জন্মানো গাছ মহাকাশেও চাষ করা যেতে পারে। তাহলে যাদের মহাকাশে দীর্ঘ সময় কাটাতে হয় তাদের খাবার অভাব হবেনা। মহাকাশে পালংশাক, লেটুস, আলু এগুলো আগে ফলানো গেছে। এধরনের নানা গাছপালা ফলানো গেলে লম্বা সময়ের মিশনে খাদ্যাভাব হবেনা।