ফিলিপিনসের নতুন প্রাগিতিহাস

ফিলিপিনসের নতুন প্রাগিতিহাস

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৭ জুন, ২০২৫

দীর্ঘদিন ধরে মনে করা হতো, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রান্তসীমার এক নিঃসঙ্গ ভূখণ্ড ফিলিপিন দ্বীপপুঞ্জ। কিন্তু মিনডোরো দ্বীপে ১৫ বছরের তথ্যভিত্তিক অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে এমন এক মানব ইতিহাস, যা কেবল এই দ্বীপের নয়, গোটা অঞ্চলটির প্রাগৈতিহাসিক মানচিত্র পালটে দিয়েছে। মিনডোরো কখনোই মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ভূতাত্ত্বিক সেতুতে যুক্ত ছিল না। এখানে পৌঁছানোর একমাত্র পথ জলপথ। আর অবাক করার মতন বিষয়, অন্তত ৩৫,০০০ বছর আগে প্যালিওলিথিক যুগের মানুষরা এখানে এসেছিল স্বেচ্ছায়, নৌকা বানিয়ে, দিগন্ত পেরিয়ে। সাগর পেরোনোটা তাদের কাছে কল্পনা নয়, ছিল জীবনযাত্রার অপরিহার্য অংশ। মিনডোরোর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন শুধু প্রযুক্তি নয়, কৃষ্টিগত চলাচলের এক চমৎকার গল্প বলে। বিভিন্ন জায়গায় খননকার্য থেকে উদ্ধার হয়েছে পাথরের তৈরি সরঞ্জাম, সামুদ্রিক শামুকের খোল, হাঙর ও বোনিটো মাছের হাড় এবং হাড়ের তৈরি ছিপ। এ থেকে বোঝা যায়, তারা শুধু উপকূলেই থেমে থাকেনি, গভীর সমুদ্রে ছিল তাদের আনাগোনা। এখানে এমন সব অস্ত্র ও সরঞ্জাম পাওয়া গেছে, যেগুলোর রাসায়নিক স্বাক্ষর মেলে পালাওয়ানের ওবসিডিয়ান শিলার সঙ্গে। অর্থাৎ দ্বীপান্তর সংযোগ, আদানপ্রদান ও বাণিজ্য চলত রমরমিয়ে। ইলিয়ান দ্বীপ থেকে পাওয়া গেছে ৫,০০০ বছরের পুরনো এক মানব দেহাবশেষ। দেহটি শোয়ানো ছিল ভাঁজ করে, চুনাপাথরের ফলকের মাঝে। নিছক মাটিচাপা নয়, এটি ছিল প্রতীকী-শ্রদ্ধাঞ্জলি, ভক্তি এবং ঐতিহ্যের প্রতিফলন। এমন ভাঁজ করা সমাধি পাওয়া গেছে ভিয়েতনাম এবং ইন্দোনেশিয়াতেও। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, মতাদর্শের আদানপ্রদানও ঘটত এই সাগরবেষ্টিত কৃষ্টি পথে। মিনডোরোতে বিশাল ‘ত্রিদকনা’ ঝিনুকের তৈরি কুঠার পাওয়া গেছে, যা ৭,০০০-৯,০০০ বছরের পুরনো। অথচ এ রকম কুঠার পাওয়া যায় ৩,০০০ কিলোমিটার দূরের পাপুয়া নিউ গিনিতেও। অর্থাৎ উপকরণ, প্রযুক্তি ও ধারণাগুলো নৌপথেই বিস্তার ঘটিয়েছে। মিনডোরোর খনন শুধু একটি দ্বীপের ইতিহাস নয়, বরং গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপপুঞ্জের অজানা ঐতিহ্যের দরজা খুলে দিয়েছে। মানুষের যাত্রা, অভিযোজন, এবং কৃষ্টির পরস্পর সংযোগের মধ্যে দিয়ে উঠে এসেছে এক নতুন ভূগোল- যেখানে দ্বীপ মানে অন্তরাল নয়, বরং প্রবেশপথ !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 − 9 =