বয়স্কদেরও মস্তিষ্ককোষ জন্মায়

বয়স্কদেরও মস্তিষ্ককোষ জন্মায়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৩ জুলাই, ২০২৫

শিশুকাল পেরোনোর পরই মস্তিষ্ক নতুন স্নায়ুকোষ উৎপাদন বন্ধ করে দেয়, এই ধারণা দীর্ঘ প্রচলিত। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পাঠ্যক্রমেও বলা হয়, মস্তিষ্কের বৃদ্ধি নির্দিষ্ট একটি সময়ের পর থেমে যায়। কিন্তু সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক গবেষণা প্রমাণ করেছে, মানুষের মস্তিষ্ক বয়স বৃদ্ধির পরেও নতুন স্নায়ু কোষ তৈরি করতে সক্ষম। মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র হিপোক্যাম্পাসে এই নতুন স্নায়ুকোষের উৎপত্তি ঘটে। ২০১৩ সালে গবেষক জোনাস ফ্রিসেন ও তার দল কার্বন-১৪ বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছিলেন যে প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিক্ষেত্রেও নতুন স্নায়ুকোষের জন্ম হয়। কিন্তু কিছু বিজ্ঞানী এই তথ্য নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন। তবে নতুন গবেষণায় জানা গেছে, প্রাপ্তবয়স্কদের মস্তিষ্কেও এই স্নায়ুকোষের উৎপাদন সক্রিয় রয়েছে। ফ্রিসেন বলেন, “আমরা এবার এসব কোষের উৎস নিরূপণ করতে পেরেছি। প্রাপ্তবয়স্ক মস্তিষ্কেও নিউরনের সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।” তারা নবজাতক থেকে শুরু করে ৭০ বছর বয়সী ব্যক্তির মস্তিষ্কের কোষ বিশ্লেষণ করেছেন। ‘একক কোষ আরএনএ সিকোয়েন্সিং’ প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিটি কোষের জিনগত পর্যায়ক্রম অধ্যয়ন করা হয়। এছাড়া কোষ প্রবাহ বিশ্লেষণের সাহায্যে কোষের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা হয়। ফলাফল অত্যন্ত আশ্চর্যজনক। তারা স্টেম সেল থেকে নতুন স্নায়ু গঠনের পর্যায়ক্রমিক রূপান্তরের প্রমাণ পেয়েছেন। তার সাথে দেখেছেন অনেক কোষ এখনও বিভাজিত হচ্ছে। অর্থাৎ জীবনের বয়স্ক পর্যায়েও মস্তিষ্ক নিজেকে পুনর্গঠন করছে। নতুন স্নায়ুকোষগুলি প্রধানত ডেন্টেট গাইরাসে উৎপন্ন হচ্ছে, যা হিপোক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে অবস্থিত। এটি স্মরণশক্তি ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আরও জানা যায়, মানুষের স্নায়ুকোষ তৈরির কোষগুলোতে ইঁদুর, শূকর বা বানরের তুলনায় কিছু আলাদা জিনগত আচরণ দেখা যায়। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে স্নায়ুকোষ উৎপাদনের পরিমাণে পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে। যা স্নায়ুকোষ উৎপাদন এবং মস্তিষ্কের পুনরুদ্ধার ক্ষমতা বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রিসেন বলেন, “এই গবেষণা আমাদের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে মানব মস্তিষ্কের পরিবর্তন বুঝতে সহায়তা করবে এবং ভবিষ্যতে স্নায়ুর জটিল রোগের চিকিৎসায় নতুন পথপ্রদর্শক হতে পারে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − fourteen =