বরফের চাঙড় কীভাবে ঢেউয়ের তীব্রতা কমায়

বরফের চাঙড় কীভাবে ঢেউয়ের তীব্রতা কমায়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৭ জানুয়ারী, ২০২৫

হালকা এবং ঠাসা ভাসমান গোলকের একটি স্তরের ক্রিয়ায়, আগুয়ান গভীর-জলের ঢেউ পাতলা হয়ে-আসার কারণ অনুসন্ধানের জন্য পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করেছিলেন চারজন বিজ্ঞানী – রস কালভার্ট, জেসামি মোল, ব্রুস আর সাদারল্যান্ড ও টন এস ভ্যান ডেন ব্রেমার। তেলের আস্তরণ, ফেনা, সমুদ্রের বরফ যে পৃষ্ঠতলের ঢেউয়ের তীব্রতা কমায়, তা জানা আছে। সামুদ্রিক বরফ যে হারে তরঙ্গর তীব্রতা কমায় তা বিশেষ আগ্রহের বিষয়। কারণ তরঙ্গগুলি যান্ত্রিকভাবে মেরু অঞ্চলে বরফ ভাঙার কাজ করতে পারে, যেখানে বরফ পিছিয়ে আসছে এবং উষ্ণ জলবায়ুতে পাতলা হচ্ছে। কাজেই যেসমস্ত ঘটনা পৃষ্ঠ-তরঙ্গকে দুর্বল করতে পারে, তার মধ্যে সমুদ্রের বরফই সম্ভবত সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে। ক্ষেত্র পরিমাপে বরফের নিচ দিয়ে প্রবাহিত তরঙ্গের কম্পন-বিস্তারের যে-ক্ষয় পরিলক্ষিত হয়েছে, তাকে পরীক্ষামূলকভাবে তরঙ্গ-নালা (ফ্লুম) ব্যবহার করে অনুসন্ধান করা হয়েছে । এটির মডেল করার জন্য বিভিন্ন ধরণের তত্ত্বর প্রস্তাব করা হয়েছে। তাত্ত্বিকভাবে, পর্যবেক্ষিত কম্পন-বিস্তারের ক্ষয়, দুটি প্রক্রিয়ার সংমিশ্রণের কারণে হতে পারে – বিক্ষিপ্তকরণ এবং অপসারণ। বিক্ষিপ্তকরণ শুধুমাত্র শক্তি পুনঃবণ্টন করে কিন্তু নির্মূল করে না। এই দুটি প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনটি প্রভাবশালী তা নির্ভর করে সমুদ্রের বরফের গঠন এবং তরঙ্গ ক্ষেত্রের বৈশিষ্ট্যের উপর। সমুদ্রের বরফের নীচে তরঙ্গ বিবর্তনের বেশিরভাগ কার্যকরী মডেলে উভয় প্রক্রিয়ার মডেলই অন্তর্ভুক্ত। তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের সাথে তুলনীয় বৈশিষ্ট্যযুক্ত আকারের তরঙ্গ এবং পৃথক বরফের চাঙড়গুলির মধ্যে মিথস্ক্রিয়া, তরঙ্গ শক্তির একটি অনুপাতের প্রতিফলন, এটির আংশিক অপচয় এবং অবশিষ্টাংশের সংক্রমণের ফলাফল। যখন বরফের চাঙড়গুলি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তুলনায় অনেক ছোট হয়, যেমন প্যানকেক বরফের ক্ষেত্রে, তখন সাধারণত প্রাথমিকভাবে তরঙ্গগুলির ক্ষয় সান্দ্র ক্ষতির ফলে হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয় এবং সমুদ্রের বরফকে একটি অবিচ্ছিন্ন মাধ্যম হিসাবে মডেল করা হয়। শেন এবং স্কয়ার প্যানকেক বরফের মডেল তৈরি করে প্যানকেক বরফের সংঘর্ষের কারণে সমুদ্রের বরফ দ্বারা ক্ষয় হওয়ার কারণকে ব্যাখ্যা করতে একটি থিওরি খাড়া করেন। সাদারল্যান্ড এবং বামফোর্থ একটি আংশিক ভরা আয়তাকার ট্যাঙ্কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী আছড়ে-পড়া ঢেউ নিয়ে কাজ করেন। সময়ের সাথে সাথে ঢেউগুলির দুর্বল হয়ে-ওঠার ঘটনাটিকে তাঁরা কতকগুলি ঠাসা ভাসমান গোলকের সাহায্যে পরীক্ষা করেছেন। দেখা গেছে, গোলকের একটি একক স্তর দ্বারা তরঙ্গ দুর্বল হওয়ার সময়ের সাথে সূচকীয় (এক্সপোনেন্‌শিয়াল) সম্পর্ক আছে । একটি বিশেষ গাণিতিক মডেল অনুসরণ করে তাঁরা দেখতে পেয়েছেন যে গোলকের গভীরতার দুটি বা ততোধিক স্তর থাকলে তরঙ্গগুলি একটি সীমাবদ্ধ সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে দুর্বল হয়ে পড়ে। গুরুসামি গোলকের অভিঘাতে দুর্বল হয়ে-পড়া আছড়ে-পড়া ঢেউ নিয়ে অনুরূপ পরীক্ষা চালিয়ে দেখিয়েছেন যে তরঙ্গর কম্পন-বিস্তারের বর্গের সাথে সাথে ক্ষয়ের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এই গবেষণার ফলস্বরূপ একটি নতুন আধা-পরীক্ষাসিদ্ধ তত্ত্ব নির্মিত হয়েছে যা বলে যে ভাসমান গোলকের তলদেশে টারবুলেন্সের কারণে তরঙ্গের ক্ষয় হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five + twelve =