বর্ণ ও গন্ধ

বর্ণ ও গন্ধ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

নাক দিয়ে গন্ধ নেওয়া একটা সহজ সরল প্রক্রিয়া বলে মনে হলেও আদপে তেমনটা নয়। এই প্রক্রিয়ায় আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি এমনভাবে পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে যে, গন্ধ নেওয়া বিষয়টি জটিল হয়ে পড়ে । আমরা কোনো জিনিসকে কীভাবে দেখি, তার উপর নির্ভর করে সেই বস্তুর গন্ধ পরিবর্তন হয়ে যায়। আবার কখনও কখনও কোনো জিনিসের গন্ধ, আমাদের রঙের উপলব্ধিকে বিকৃত করে দেয়। লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয় এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা সহযোগিতায় গন্ধ-রং এর একযোগে গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন ।
আমাদের পাঁচ-ইন্দ্রিয়, পরিবেশ থেকে নানান তথ্য সংগ্রহ করে চলেছে অহরহ। আমাদের মস্তিষ্ক, এই প্রচুর তথ্যের অর্থ বুঝতে, দুই বা ততোধিক ইন্দ্রিয়ের সাথে তথ্যকে সংযুক্ত করে। বিশেষজ্ঞরা এই ক্রিয়াকে ‘ক্রসমোডাল সংযোগ’ বলে উল্লেখ করেছেন। ‘ক্রসমোডাল সংযোগ’ অনুযায়ী, একটি ইন্দ্রিয় অন্যটিকে প্রভাবিত করে। এই ধরনের সংযোগগুলি, গন্ধ অনুযায়ী মস্তিষ্কর মধ্যে বস্তুর রং -রেখা তৈরি করে। সেই রং-রেখা বস্তুর নিজস্ব রঙের সাথে মিলতে পারে, আবার নাও মিলতেও পারে। আমাদের মস্তিষ্ক সম্পূর্ণভাবে সচেতন না হয়েও, এরূপ পরিবর্তন ঘটায়। আবার কোনো বস্তুর রংও অনুরূপভাবে তার গন্ধ চেনার প্রক্রিয়াটিকে প্রভাবিত করতে পারে । ইন্দ্রিয়ের মিশ্রণ মিশ্রিত তথ্য সরবরাহ করে । এই গবেষণা বলছে, আমাদের মস্তিষ্ক আসলেই গন্ধ এবং চিত্রকে আলাদা অভিজ্ঞতা হিসেবে বিবেচনা করে না।
বর্ণান্ধতা বা ঘ্রাণশক্তির অভাবে ভুগছেন না, এমন ২০ থেকে ৫৭ বছর বয়সী, ২৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক স্বাভাবিক মহিলা এবং পুরুষকে বেছে নেওয়া হয় এ গবেষণার জন্য। পরীক্ষার সময়কালে, তাদের কোনো সুগন্ধি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। অবাঞ্ছিত সংবেদী উদ্দীপনা থেকে মুক্ত একটি ঘরে, একটি স্ক্রিনের সামনে তাদের বসানো হয়। বিচ্ছিন্ন একটি ঘরে কিছু নির্দিষ্ট গন্ধ (ক্যারামেল, চেরি, কফি, লেবু এবং পেপারমিন্ট এবং গন্ধহীন জল) চার মিনিটের জন্য একটি এয়ার পিউরিফায়ারের মাধ্যমে চালান করা হয়। সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রঙের ছবির ব্লক দেখানো হয়। এক্ষেত্রে তাঁরা কফিকে গাঢ় বাদামি এবং লাল রঙের সাথে, চেরি, হলুদ এবং সবুজ রঙকে পেপারমিন্ট এর সাথে সংশ্লিষ্ট করতে পারেন। তারপর আবারও এই ছয়টি গন্ধের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট গন্ধ শব্দ-উত্তর ডিফিউজার দিয়ে পাঁচ মিনিটের জন্য ঘরে চালান করা হয়। অচেতন সংযোগের ফলে পরবর্তীতে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে দুর্বল কিন্তু উল্লেখযোগ্য একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন কফির গন্ধ উপস্থিত হলে, তারা ভুলভাবে ‘ধূসর’কে প্রকৃত ধূসরের চেয়ে বেশি লালচে বাদামি রং হিসেবে উপলব্ধি করতে থাকে। একইভাবে, ক্যারামেলের গন্ধ উপস্থিত হলে, তারা ভুলভাবে হলুদ সমৃদ্ধ একটি রংকে ধূসর হিসেবে উপলব্ধি করে। গন্ধের উপস্থিতি এইভাবে অংশগ্রহণকারীদের রঙের উপলব্ধিকে বিকৃত করে তোলে। “এখানে আমরা দেখাই যে বিভিন্ন গন্ধের উপস্থিতি কীভাবে মানুষের রঙ উপলব্ধিকে প্রভাবিত করে,” বলেছেন গবেষণা পত্রের প্রধান লেখক ড. রায়ান ওয়ার্ড। এই গবেষণা সংবেদী বিজ্ঞানে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ প্রদান করেছে।

সূত্র :

https://www.earth.com/news/our-sense-of-smell-and-different-odors-can-influence-how-we-see-colors/

https://www.frontiersin.org/news/2023/10/06/frontiers-psychology-cross-modulation-sense-of-smell-color-vision

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 5 =